রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৮ মে) বিকেলে তাকে শোকজ করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সংস্থাপন ও প্রধান তথ্য প্রধানকারী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত শুক্রবার (৬ মে) রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানার ঘটনায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ দেন পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন।
রোববার (৮ মে) দুপুরে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী তিন ব্যক্তিকে জরিমানার ঘটনার তদন্ত চলবে। এক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় দুদিন বাড়ানো হয়।
এদিন নিজ ক্ষমতাবলে টিটিই শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম।
শাহীদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা চলাকালে তিনি ছুটিতে ছিলেন। তিনি ছুটি শেষে রোববার সকালে অফিসে যোগ দিয়েছেন। এর আগে ভারপ্রাপ্ত ডিআরএম হিসেবে কর্মরত ছিলেন বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। এ আদেশটি যথাযথ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। রেলওয়েসহ সব বিভাগে ভালো কাজের জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তদন্ত কাজে যদি প্রমাণিত হয় ওই টিটিই শফিকুল ইসলাম সঠিক কাজ করেছেন তাহলে তিনিও পুরস্কৃত হবেন। সেটা ধন্যবাদ জানিয়েও হতে পারে।
তিনি জানান, তদন্তের আগেই তাকে দীর্ঘ সময়ে সাসপেন্ড করে রাখা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন। কারণ তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। এজন্য তিনি তাকে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছেন। শফিকুল অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে কাজে যোগ দিতে পারবেন। একইসঙ্গে তদন্তের সময় দুদিন বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) দিনগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে এসি রুমে উঠেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে তিন যাত্রী। মাঝপথে তাদের বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
শনিবার (৭ মে) ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ড্যান্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
পাকশী বিভাগীয় রেল সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। তবে তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে শনিবার (৭ মে) গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়, তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।