সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢল নেমেছে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের। তবে নৌপথে ঈদযাত্রায় বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে কালবৈশাখী। প্রায়ই বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বিপরীতে প্রশাসন ও লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা বলা হলেও বাস্তবে দেখা গেলো ঢিলেঢালা ভাব। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, নিরাপদ হবে তো এবারের নৌযাত্রা?
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রতি ঈদে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। এর ২৫ শতাংশই নির্ভর করেন নৌপথের ওপর।
ঢাকার সদরঘাট থেকে ৪৫টি নৌরুটে এ যাত্রীরা যাতায়াত করেন। ধারণা করা হচ্ছে এবার লঞ্চে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় জেলাগুলোয় যাবেন এবং ঈদের পর আবার ফিরে আসবেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)-এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঝড়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা, ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে পরের পাঁচ দিন লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা, নদীতে বালিবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা ইত্যাদি।
এছাড়া সদরঘাট টার্মিনালে বাড়ানো হয়েছে পন্টুন সংখ্যা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধে ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধে নজরদারির কথাও বলা হচ্ছে।
অবশ্য অধিকাংশ লঞ্চের ডেকেই অতিরিক্ত যাত্রী ও প্রশাসনের তাদরকির অভাব দেখা গেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
লঞ্চের প্রবেশমুখে ধারণক্ষমতাসহ নিরাপত্তাসামগ্রীর পরিমাণ উল্লেখ করা আছে। তবে তালিকায় বয়া, লাইফ জ্যাকেট ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের যে সংখ্যা বলা আছে তা লঞ্চ ও যাত্রীর তুলনায় অপ্রতুল।
সদরঘাট থেকে দেশের ৪৩টি নৌ রুটে স্বাভাবিক সময়ে ৮০টির মতো লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের সময় তা বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সুযোগে অনেক আনফিট লঞ্চেও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
ফরাশগঞ্জ, ওয়াইজঘাট, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচরসহ বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে আনফিট এসব লঞ্চ মেরামত করে, রঙ করে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে।
লঞ্চ ঈদ যাত্রালঞ্চে ঈদযাত্রা
ভোলাগামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানাউল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘লঞ্চের ডেকে যে পরিমাণ যাত্রী নেওয়া হয়েছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অতিরিক্ত যাত্রী না তোলার কথা বলা হলেও নজরদারি নেই।’
মনপুরা ও হাতিয়া রুটের এমভি ফারহানা-৪ লঞ্চের মাস্টার এনামুল হক বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর লোকজন মাঝে মাঝে এসে খোঁজখবর নিয়ে যায়।
ঈদে লঞ্চ বেড়েছে। তদারকি কিছুটা কম হচ্ছে। এতে অনেক ফিটনেসবিহীন লঞ্চও চলছে। আবার অনেক অদক্ষ মাস্টারও লঞ্চ চালাচ্ছেন। ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চগুলো যখন নদীতে নামবে তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।’
বিআইডব্লিউটিএ বলছে আনফিট লঞ্চ ঘাটে ভেড়ানো ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ নেই। কিন্ত ঘাটে ভেড়ানো লঞ্চের ফিটনেস চেক করা হয় সার্ভে সনদ দিয়ে।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও আনফিট লঞ্চের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আনফিট লঞ্চের বন্দরে আসার সুযোগ নেই।
যেসব লঞ্চের সার্ভে সনদ নেই তারা ঘাটে লঞ্চই রাখতে পারবে না। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন যাতে না হয় সেটার তদারকিও অব্যাহত আছে।’
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেকেই এখন লঞ্চ ব্যবসায় আসছে। কিন্তু লঞ্চের নিরাপত্তার বিষয়টি সবাই দেখছে না।
লঞ্চ যখন বানায় সেটা কীভাবে বানানো হচ্ছে সেটা দেখা হয় না। শুধু একটা সার্টিফিকেট দিলেই হয়ে যায়।
এখন টাকা দিয়েও সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যায়। সুতরাং সব লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই।’
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা ও তদারকি অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে ঈদযাত্রার এত বিশালসংখ্যক যাত্রীর সেবা নিশ্চিত করতে লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও জরুরি।’