কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠের পরিবর্তে শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অন্যথায় তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৪ এপ্রিল) এই মাঠরক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ায় ১২ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখা হয় কলাবাগান মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না ও তার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে।
পরে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে কলাবাগান থানা থেকে মুক্তি পান সৈয়দা রত্না। এ সময় অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠের সন্ধান না দিলে ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশ রত্না আপা ও তার ছেলেকে যেভাবে ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসবে বলে আশা করছি। ওই এলাকায় শিশুদের জন্য খেলার মাঠ একটিই। বিকল্প মাঠের সন্ধান না দিলে সেখানে থানার ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পয়াদক জামশেদ আনোয়ার তপন সাংবাদিকদের বলেন, রত্না আপা ও তার পুত্রকে সারাদিন অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। আমরা সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশকর্মীসহ এলাকাবাসী থানায় এসে সারাদিন অবস্থানগ্রহণ করেছিলাম। এ বিষয়ে সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছি। এছাড়া কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে বিকেল তিনটাই মাঠেই সমাবেশ করবো। সেখানেই আগামীদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি জানান, তাদের এ আন্দোলন অত্যন্ত ন্যায্য। কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা আটক করে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। তাদের আন্দোলন চলেব।
এর আগে রাতে সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র পালবলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সৈয়দা রত্না ও ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে রাতে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কাজে তারা আর বাধা দিবেন না এই অঙ্গীকারে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কলাবাগানের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তেঁতুলতলা মাঠের এক বিঘা জমি একজন বিহারির মালিকানায় ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। সেই জায়গাটিতে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করতো।
সরকারি খাসজমি হিসেবে নথিভুক্ত এই ফাঁকা জায়গাটিতে থানা করতে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এরপর থেকেই সেই জায়গাটি খেলাধুলার জন্য ফাঁকা রাখার দাবি উঠেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খেলার মাঠের সংকট থাকলেও কলাবাগানে সিটি করপোরেশনের খেলার মাঠ আছে। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশেই সেই মাঠ।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি শাহগুফতা বলেন, গতকাল রাত ১টার দিকে মাঠে ট্রাক নিয়ে আসে ইট, সুরকি ফেলার জন্য। সকাল থেকে মাঠে ইট, সুরকি ফেলা শুরু হয়। আম্মু সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে মাঠের এখান থেকে একটা ফেসবুক লাইভ করেন। তখন এক কথা দুই কথায় পুলিশ মাকে ধরে পুলিশ ভ্যানে ওঠায়।
সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে আমার ছোট ভাই ঈসা আব্দুল্লাহ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, বুবু আম্মুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ কথা বলে সে ফোন কেটে দেয়। আমি তাকে ফোন ব্যাক করলে ও বলে, বুবু আমাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এর পর দুইবার ফোন দিলে ফোন কেটে দেয়। এরপর থেকে আমার ভাইয়ের ফোন বন্ধ।