অনাথ কিশোরীকে দত্তক নিলেন রকিবুল হাসান

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতৈল গ্রামের এক অনাথ কিশোরীকে দত্তক নিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এ এস এম রকিবুল হাসান। ওই কিশোরীর নাম রিয়া মনি। রকিবুল হাসানের গ্রাম রাতৈলের নায়েবুন্নেছা গার্লস হাই স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া মনি। নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করে ওই কিশোরীর সব দায়িত্ব নিয়েছেন রকিবুল হাসান। রিয়া মনিও বাবা হিসেবে গ্রহণ করেছে রকিবুল হাসানকে।

রিয়া মনির বাবা-মা দুজনই অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে থাকছে তার খালার কাছে। নতুন বাবা পেয়ে এখন নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছে কাশিয়ানীর রাতৈল গ্রামের ওই কিশোরী।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান দুই পুত্র সন্তানের জনক। এখন তার ঘরে যোগ হলো দত্তক নেওয়া কন্যা। যদিও রিয়া আপাতত ওখানে থেকেই লেখাপড়া করবে। আগামীতে ঢাকায় এনে আরও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাকে ভর্তি করানোর পরিকল্পনা আছে রকিবুল হাসানের।

কিভাবে মেয়েটির সন্ধান পেয়েছেন রকিবুল হাসান? জানা যাক সেই গল্পটা তার মুখ থেকেই-

‘এটা একটা কাকতালীয় ব্যাপার। গত ১৪ আগস্ট আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। ওই স্কুল যার নামে সেই নায়েবুন্নেছা আমার দাদী। আমি স্কুলটির দাতা সদস্য। দুই মেয়াদে চেয়ারম্যানও ছিলাম। এপেক্স বাংলাদেশ নামে একটা ফাউন্ডেশন আছে। আমি সেটার চেয়ারম্যান। কিছুদিন আগে নতুন কমিটি হয়েছে। ওই কমিটির ব্যানারে ১৫ আগস্ট জাতীয় শেখ দিবসে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে পুস্পস্তবক অর্পণের জন্যই আমি গ্রামে গিয়েছিলাম।

আমি যখনই গ্রামে যাই, তখন স্কুল পরিদর্শন করি। ১৫ আগস্ট শোক দিবসেও স্কুল পরিদর্শনে গেলাম। স্কুলটি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রধান শিক্ষকসহ বাকি শিক্ষকরা আমাকে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে নিয়ে গেলেন। দশম শ্রেণি থেকে শুরু করেছিলাম পরিদর্শন। আমি প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়েই জানতে চেয়েছিলাম, তোমাদের মধ্যে কেউ আছো যাদের বাবা-মা নেই? এভাবে আমি সপ্তম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে জানতে চাইলে ৫ জন উঠে দাঁড়ালো। কারও বাবা আছেন, মা নেই। আবার কারও মা আছেন, বাবা নেই। পঞ্চম ও শেষজনকে (রিয়া মনি) জিজ্ঞাস করলাম-তোমার কে নেই? বাবা নাকি মা? তার চোখে পানি। বললো আমার কেউ নেই। বাবা ও মা দুইজনই চলে গেছে ছেড়ে।

মেয়েটির চোখে পানি দেখে আমার চোখেও পানি এসে গেলো। আমি মেয়েটিকে বললাম- আমার দুটি ছেলে আছে বড়। কোনো মেয়ে নেই। তোমাকে কি আমি মেয়ে ডাকতে পারি? তুমি কি আমাকে বাবা বলতে পারবা? বাবার আসনে বসাতে পারবা? সে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর বললো-হ্যাঁ, পারবো। আপনাকে আমি বাবার জায়গা দিতে চাই।

তখনই আমার মনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে গেলো। ওকে বললাম-আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার। তুমি আমার মেয়ে, আমি তোমার বাবা। শ্রেণিকক্ষগুলো পরিদর্শন শেষে প্রধান শিক্ষকের কাছে মেয়েটির খোঁজ-খবর নিলাম। প্রধান শিক্ষক বললেন-রিয়া অনেক ভাল ছাত্রী। আমি প্রধান শিক্ষককে বললাম, স্কুলের প্যাডে রিয়া মনির বর্তমান অভিভাবককে চিঠি লিখতে। আমি যে তার দায়িত্ব নিতে চাই, সেটা জানাতে।

এর মধ্যেই টিফিনের সময় হয়ে গেলো। আমি আমার মেয়েকে ডেকে এনে আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। স্কুলটি আমার বাড়ি থেকে হাঁটার দূরত্বেই। বাড়িতে নিয়ে ওকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আনলাম। পরে আমার এক ভাতিজা হয় নাম মাসুদ, তাকে ফোন দিয়ে কিছু জিনিসপত্রের তালিকা করে দিলাম। পোলাওয়ের চাল থেকে শুরু করে মোমবাতি-দিয়াশলাই পর্যন্ত। এগুলো এক বস্তায় ভরে স্কুলে পাঠিয়ে দেয় মাসুদ। সেগুলো রিয়া মনিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার খালার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আমি ঢাকায় ফিরে আসার পর প্রতি রাত ৮ থেকে ৯টার মধ্যে মেয়ে আমাকে ফোন করে। মজার বিষয় হলো, ফোন করেই জিজ্ঞেস করে বাবা তুমি খেয়েছো? মা খেয়েছেন? বিষয়টা আমার স্ত্রীও ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আমি এসেই তাকে ছবি দেখিয়ে বলেছিলাম ঘটনাটা। আমার স্ত্রী বলেছে-রিয়া মনি আমাদেরই মেয়ে। আগামীতে আমি মেয়েকে আমাদের কাছে ঢাকা নিয়ে আসবো। তারপর আরও বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেবো। যাতে সে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।’

যেহেতু রিয়া-মনি এতিম নয়, তার বাবা ও মা বেঁচে আছেন। এমন এক মেয়েকে দত্তক নিলে ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা হবে কিনা জানতে চাইলে এএসএম রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি অতটা গভীরে যাইনি, চিন্তাও করিনি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মনের আবেগে আমি তাকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছি। সেও আমাকে বাবা বলে ডেকেছে। ভবিষ্যতে যদি এমন কিছু হয়, তাহলে রিয়া মনিই সিদ্ধান্ত নেবে, সে কার কাছে থাকবে।’