রোজার সময় সব পরিবারেই ইফতারিতে কম-বেশি ফল রাখেন। ভাজা-পোড়ার পাশাপাশি ফল খেয়ে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করেন সব শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও দামের কারণে ইফতারিতে বিভিন্ন রকমের ফল রাখা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে।
বাজারে ফলের কমতি নেই। স্থায়ী দোকান থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় ভ্যানে করেও ফল ফেরি করে বেড়ান অনেকে। সেসব ফলের চাহিদাও কম নেই ক্রেতাদের কাছে। বিশেষ করে এই রমজানের সময়। তার ওপর রয়েছে কাঠফাটা রোদ। যেখানে তাপমাত্রা ৩৫-৩৮ ডিগ্রি।
গ্রীষ্মের সময়ে বাজারে রসালো এবং মুখরোচক নানা স্বাদের ফলের অভাব নেই। তরমুজ, আপেল, বেল, বাঙ্গী, কলা, কমলা, মাল্টা, আঙুর, নাসপাতি, ডাব, পেঁপে, বরই, সফেদাসহ আরো কিছু ফলের দেখা মেলে বাজারে। কেবল কিনতে গেলেই দাম শুনে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয়। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে কেনেন যৎসামান্য।
বর্তমান রোজায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত ফলের নাম তরমুজ। অভিযোগ রয়েছে, তরমুজ বিক্রেতা পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে পিস হিসেবে কিনে এনে বিক্রি করছেন কেজি দরে। এতে তাদের লাভ হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি।
বাজারে সরবরাহ যথেষ্ট থাকার পরও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ভিন্ন নামে, বিভিন্ন মানের খেজুরের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। একশ টাকার নিচে বাজারে কোনো খেজুর নেই। সর্বোচ্চ খেজুরের কেজি হাজার টাকারও বেশি। যদিও রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষে দাম অর্ধেক হয়ে যাবে বলে জানান রাজধানীর কদমতলীর পাইকারি ফল ব্যবসায়ী জনতা ফল বিতানের রইসুদ্দিন গাজী।
অনেকে রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর ভাজা-পোড়া খাবার বাদ দিয়ে শরবত, দই-চিড়া বা বিভিন্ন ফল দিয়ে ইফতার করতে চান। তাপদাহের কারণে এসব ফল বেশি করে কিনে রাখা যায় না, নষ্ট হওয়ার কারণে। সে কারণেই রোজার প্রতিদিনই ফলের দোকানগুলোতে চাপ বাড়ে ক্রেতার। অথচ পছন্দ এবং চাহিদা মতো ফল কিনতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন অনেকে।
ধানমন্ডি পাঁচ নম্বরে অনেক বছর ধরে সিজনাল ফলের ব্যবসা করছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার রোজার শুরু থেকে ক্রেতারা ফল দেখছেন বেশি, কিনছেন কম। গরম এবং রমজানে বেশি বিক্রির আশায় অনেক পরিমাণে ফল কিনেছিলাম। কিন্তু কম বিক্রি হওয়ায় বেশ কিছু ফল ইতোমধ্যে পচে গেছে। এবার লাভের জায়গায় বেশ লস হয়ে গেল।’
নিউ মার্কেট ও হাতিরপুল বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানের কারণে প্রায় সব ফলের দাম বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক সময় পিস হিসেবে বিক্রি হলেও, গত বছর থেকে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে তরমুজের দাম উঠানামা করছে। একটা মধ্যম সাইজের তরমুজের দাম তিন শ থেকে ৩৫০ টাকা।
অন্যদিকে, রসালো ফল হিসেবে পরিচিত এক কেজি মাল্টার দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা। মাঝারি এক পিস আনারস ৪০-৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি ছোট বেলের দাম ৫০-৬০ টাকা, বড় বেল ১০০-১২০, আঙুরের কেজি ২৭০-২৮০, আপেলের দাম কেজি প্রতি ২২০-২৫০ টাকা। দেশি চম্পা কলার ডজন ১২০ টাকা, সাগর কলা ১৬০-১৮০ টাকা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজারের এসব ফলের বড় অংশই আসে পুরোনো ঢাকার বাদামতলী থেকে।
নিউ মার্কেটের ফল দোকানি মিজান বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে আগের চেয়ে বেচাকেনা কম। তারপরও যারা কিনছেন, তারা বারো মাসই কেনেন। বেশিরভাগই পরিচিত কাস্টমার। এরা দামের চেয়ে ফলের গুণগতমান বেশি দেখেন। তবে কিছু সাধারণ ক্রেতা কিনতে এসে দাম শুনে আর কিনেন না।’
তবে ১০-১২ রোজা গেলে ফলের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও জানান এই ফল ব্যবসায়ী।
ফল কিনতে আসা একজন বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা বদিউজ্জামান রবি আক্ষেপ করে বলেন, রোজার সময় সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর ইচ্ছে থাকলেও ফল কিনতে পারি না। তারপরও ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সামান্য মাল্টা আর আঙুর কিনলাম। শরবতের জন্য ছোট্ট একটা বেল কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে।’
আরেকজন ক্রেতা রাইসা ইসলাম বলেন, ফলের দাম দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আপাতত অন্য জিনিসপত্র কিনলাম। কয়েক রোজা গেলে দাম কমবে, তখন কিনবো। প্রতিবছরই রোজার প্রথমে ফলের দাম দ্বিগুণ করে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। তাই কিনি না।