উপকূলের তরমুজে বাজার সয়লাব

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

 সুস্বাদু বিভিন্ন জাতের তরমুজে সয়লাব বাজার। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় জনপদ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে তরমুজের উৎপাদন বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বরগুনার বেতাগী পৌরসভায় ছোট বড় বিভিন্ন আকারের তরমুজে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিক্রেতারা দামও পাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপকূলীয় জনপদ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, খেপুপাড়া, কুয়াকাটা, দশমিনা, ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, বাউফল,  বরগুনা জেলার তালতলী,  আমতলী,  বরগুনা সদর, বেতাগী,  পাথরঘাটা ও বামনা এলাকায় এ বছর তরমুজের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে একযুগ ধরে উপকূলের কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের কাছে তরমুজ চাষ প্রধান অর্থকারী ফসল হয়ে উঠেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, অল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় মৌসুমি ফলের মধ্যে তরমুজের কোনো বিকল্প দেখছেন না চাষিরা। এ বিষয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, এটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু এবং  গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণ জল থাকে। পলি ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মে।’
  পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  নিউট্রিশন ও ফুড ম্যানেজমেন্ট অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক সুজন মালী বলেন, তরমুজে শতকরা ৬ ভাগ চিনি এবং ৯২ ভাগ জল এবং অন্যান্য উপাদান  রয়েছে ২ ভাগ। এটি ভিটামিন এ জাতীয় ফল।’
 সংশ্লিষ্টরা চাষিরা জানিয়েছেন,  আবহাওয়া অনুকূলে থাকার ঝুঁকি ছাড়াই বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা।  তরমুজ চাষে পরিশ্রমটা অনেক। বীজ বপনের পর তরমুজের চারা লালন করতে হয়। জৈব ও রাসায়নিক সার, ওষুধের মাত্রা বাড়তি হলেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
 বেতাগীর বিবিচিনি ইউনিয়নের চাষি আব্দুর রাজ্জাক  জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। যারা আগাম চাষ করেছিলেন তাদের তরমুজ আগে থেকেই ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। গেল দুই সপ্তাহ ধরে তরমুজের মৌসুম শুরু হয়েছে ।’ তিনি আরো বলেন, গত বছর মাঠে পানি উঠায় লোকসান হয়েছে এবার তা পুষিয়ে উঠবেন এবং লাভের মুখ দেখবেন।
  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যলয় থেকে জানারগেছে  তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে  উপকূলীয় ৬ জেলায় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত মৌসুমের  চেয়ে ১১ হাজার ৭৬৩ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে পটুয়াখালী, বরগুনা।
  ভোলার তুলনামূলক ভাবে বরিশাল, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি জেলায় কম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বরগুনায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর, ভোলায় ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, বরিশালে ৬৪৬ হেক্টর, পিরোজপুরে ১০৬ হেক্টর এবং ঝালকাঠিতে ৪৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
বেতাগী পৌর শহরের  বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা আড়ৎদারদের নিকট থেকে ৬-৭ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকায় আর এর থেকে  একটু বড় ৮-১০ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় এবং ১০-১৫ কেজি ওজনের ১শ পিস তরমুজ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে ৬-৭ কেজি ওজনের তরমুজ ১ শ ৫০ টাকা থেকে ২ শ একট ৮-১০ কেজি ওজনের ২ শ থেকে ২ শ ৫০ টাকায় কিনছেন। তবে ৪-৫ কেজি ওজনের ৮০ -১৫০ টাকায় কিনছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। সারাদেশে এ অঞ্চলের তরমুজের চাহিদাও বেশি। আমরা আশা করছি, এ বছর সব কৃষকই লাভবান হবেন।