চালসহ বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে স্বস্তি দিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজিদরের চালের উপকারভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে উপকারভোগীদের সংখ্যা ১০ লাখ বাড়িয়ে ৬০ লাখ করার প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। উপকারভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় সারাদেশে ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে সরকার। এ পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজিদরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। পল্লী অঞ্চলের কর্মাভাবকালীন মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর- এই পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চাল, ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বিধিনিষেধ থাকায় সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকে হারিয়েছেন কর্মসংস্থান। করোনা পরিস্থিতি যখন উন্নতি দিকে, স্বাভাবিক হচ্ছে সবকিছু। এর মধ্যেই দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সংকটে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে।
মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের নানা উদ্যোগও রয়েছে। বিস্তৃত পরিসরে খোলাবাজারে (ওএমএস) চলছে চাল ও আটা বিক্রি। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে স্বল্পমূল্যে দেওয়া হচ্ছে নিত্যপণ্য। এ অবস্থায় ১০ টাকা কেজিদরে চালের সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রাথমিকভাবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ১০ লাখ বাড়ানোর বিষয়টি আলোচিত হলেও এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৬০ লাখে উন্নীত করার একটি বিষয় রয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটার সঙ্গে যেহেতু আর্থিক বিষয় জড়িত, তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিষয় আছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে হয়তো অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। অফিসিয়ালি আমরা এখনো অনুমোদন পাইনি। প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আমরা করছি।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হিসাব-নিকাশ চলছে। উপকারভোগীর সংখ্যা কত বাড়ালে জনগণ স্বস্তি পাবে, চালের দাম কম থাকবে, সেটি বিবেচনা করেই বাড়ানো হবে।’
গত ১৭ মার্চ উপজেলাভিত্তিক বিভাজন অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের সংখ্যা জানানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত ৫০ লাখ উপকারভোগী থাকার কথা। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বিভাগভিত্তিক উপকারভোগী উল্লেখ করা হয়েছ ৫০ লাখ ১০ হাজার ৭১০ জন। তবে উপকারভোগীর জেলা, উপজেলাভিত্তিক বিভাজন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এ কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উপজেলাভিত্তিক হালনাগাদ সংখ্যা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় জরুরিভাবে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক ৫০ লাখ ১০ হাজার ৭১০ জন উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখ করে মহাপরিচালককে তথ্য পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হলে, তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত আছি। মাঠপর্যায়ে উপকারভোগীদের তালিকা করেছেন জেলা প্রশাসক ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক। সংখ্যা বাড়ানো হলে তারা বসে নতুন উপকারভোগীদের যুক্ত করবেন। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে, সেভাবে আমরা বাস্তবায়ন করবো।’
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৬ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অতিরিক্ত এক মাসসহ মোট ছয় মাস (২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং ২০২০ সালের মার্চ, এপ্রিল ও মে) এ কর্মসূচির আওতায় চাল বিক্রি করা হয়েছে।