বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলার সপ্ন দেখেছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে তার সাড়ে ৩ বছরের সময়কালে সেটি বাস্তবায়ন করে যেতে না পারলেও, শক্ত-মজবুত একটা ভিত রচনা করে গেছেন। ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যার পরে ২১ বছর বিভিন্ন সরকারের কারনে তার সেই কাজ অগ্রসরও হতে পারেনি।
পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পরে এখন দেশের উন্নয়নের চিত্র আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ কিন্তু এখানে জনসংখ্যা বিপুল। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে আয়তন বাড়েনি।
তারমধ্যেও আজ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। একসময় যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, এখন আমরা উন্নয়নের সোপানে চলে গিয়েছি। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী পৌছানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরের একটি হোটেল মিলনায়তনে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন,বর্ষায় উজান থেকে আসা পানির সাথে প্রচুর পরিমানে পলি মাটি আসায় নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলো খনন করে সবকিছু নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করছি। জনসংখ্যা বাড়ার জন্য দিনে দিনে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন উপায়ে কৃষিজমি রক্ষার জন্য কাজ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনায় অনেক দেশ পিছিয়ে পড়লেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য স্বাস্থ্যখাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা রাখা বাজেট রেডি রাখা হয়েছিলো। অর্থাৎ যে কোন মূল্যে আমরা ভ্যাকসিন ক্রয় করবো এবং মানুষকে দেয়া হবে। আর মানুষকে বিনামূল্যেও ভ্যাকসিন দিতে পেরেছে সরকার।আবার আমাদের দেশে করোনাকালে তেমনভাবে মানুষের মৃত্যুও হয়নি।
তিনি বলেন,সরকার কাজ করে যাচ্ছে, দেশে অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। করোনায় অনেক দেশের সবকিছু মুখ থুবরে পরলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের দেশ এখন করোনামুক্ত এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে ৮২ টি প্রকল্প দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলমান। বরগুনাতে দুটি প্রকল্প পাশ করা হয়েছে, আরো তিনটি প্রকল্প হবে। পিরোজপুরে ২ টা প্রকল্প হবে। পটুয়াখালীর বাউফল, ঝালকাঠির নলছিটি ও বরিশালে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সবকাজগুলো ২/১ মাসের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের কথা প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেন। তিনি অসহায় দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করেন। আর চিন্তা করেন বিধায় করোনাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দিয়েছেন। আর মনে রাখবেন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,যে সেতু নিয়ে এতো কথাবার্তা হয়ে গেলো, সেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে এ সেতুতে যান চলাচল করবে।আগে দেখতাম ঘন ঘন বিদ্যুৎ যেতো, আর কখন আসবে তাও বলতে পারতাম না। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ চলে যায়না। আর এটাই হলো উন্নয়ন, সবাইকে সেটা বুঝতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ও ভালো চান বলেই, আজ আমরা কোথায় থেকে কোথায় চলে এসেছি।
তিনি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়কালেই জেন্ডার সমতা সবথেকে বেশি হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় আমরা প্রথম হয়েছি জেন্ডার সমতায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার মহিলা। বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, এয়ারফোর্স, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকল প্রশাসনে নেতৃত্বে মহিলা রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় জেন্ডার সমতার হার সামনের দিকে আগাচ্ছে। সমান হারে পৌছাতে সময় লাগবে, তবে যোগ্যতা অর্জনকারীদের সুযোগ এ সরকারই দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব জায়গাতেই বিচক্ষনতার সাথে অগ্রসর হচ্ছেন।
চাকুরির বিষয়ে তিনি বলেন,পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েও কিছুদিন আগের একটি নিয়োগে আমি একজনকেও চাকুরি দিতে পারিনি। তখন আমি নিয়োগ কমিটির লোকজনকে তলব করে খাতা দেখে দেখলাম কেউ শূণ্য পেয়েছে, কেউ তিন পেয়েছে, কেউ পাঁচ পেয়েছে। তিন-পাঁচ-সাত পাওয়াদের চাকুরি দেই তাহলে যে সেরা মার্ক পেলো সে তো চাকুরিটা পেলো না। এটা হলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবো আমরা। এখন চাকুরি করতে হলে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। আমি অভিভাবকদের বলি বিএ, এম না পড়িয়ে টেকনিক্যালে পড়ান। যেমন চাকুরি দেয়া যাবে, তেমনি বিদেশেও ভালো বেতনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষার সময় কাজ করে, এটা ঠিক আমরা বর্ষার সময় কাজ করি। কারন বর্ষার সময় একটি বাধে নদী ভাঙ্গন যখন দেখা যায়, তখন সেটি মেরামত না করলে পুরো গ্রাম নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে।আমরা নদী মাতৃক দেশ, ভাটির দেশের মানুষ।জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান কারনে আমাদের নদীভাঙ্গন হচ্ছে। সেইসাথে অবৈধ ড্রেজারের কারনেও নদী ভাঙ্গন হচ্ছে। এজন্য সবাইকে মিলে প্রতিবাদ করতে হবে। সরকার সবকিছু করে দিবে, তবে আপনাদের সরকারের পাশে দাড়াতে হবে। আমরা নদী তীরে বাধ বানাই, আর সেই বাধের উপর ঘরবাড়ি বানিয়ে সেটাকে দুর্বল বানানো হয়। আবার বাধের পাশে ড্রেজার চালানো হয়, তারপর বর্ষার সময় সেটি ভেঙ্গে যায়। এতে দোষ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের। যত নিয়মই বানানো হোক না কেন, জনগন সবাই মিলে যদি সেই নিয়মকে শ্রদ্ধা না করে তাহলে কাজে আসবে না। আমরা চাই সবাই নিয়ম মানবে কিন্তু আমার বেলায় সেটা হবে না। আমরা নিজেরাই নিয়ম মানি না, আবার নিয়মের কথা বলি। কিন্তু এটা হলে তো হবে না। আমাদের নিয়মকানুন মানতে হবে। আপনার সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব আপনাদের। সে কার সাথে চলাফেরা করছে? কি করছে? সেটা দেখতে হবে।
এতে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার,সাবেক সাংসদ টিপু সুলতান, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি শাহ সাজেদা, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি রাবেয়া খাতুন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুস্মিতা রায়, বরিশাল জেলা সুজন সভাপতি অধ্যাপক গাজি জাহিদ হোসেন।