শারিরীক নির্যাতন থেকে বাঁচতে গৃহপরিচারিকা মিম (১৮) সাহায্য চান এক রিকশাচালকের কাছে। সব শুনে ওই রিকশাচালক তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন।
পরে থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল শহরের কলেজ রোড এলাকায়। শুক্রবার (১১ মার্চ) দুপুরে শহরের দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকা থেকে ওই গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ সময় মিম জানায়, সে বরিশাল শহরের কলেজ রোড এলাকায় হাকিম সাহেবের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। তার চাচা স্বপন ঢাকায় থাকতে আকিমুল ইসলাম বাড়িতে কাজে দেয়। আকিমুলের বাড়ি রাজশাহী হলেও বর্তমান চাকরির সুবাদে স্ত্রী শিমু ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বরিশাল নগরের কলেজ রোড এলাকায় বসবাস করেন। তিনি ও তার স্ত্রী মিমকে কখনোই ঠিকভাবে খেতে দেন না। কাজের জন্য সময় বেধে দেওয়া হতো, না পারলে চলতো নির্যাতন।
মিম বলেন, ‘আমি যতটুকু কাজ পারি ততোটুকু তো করি। আমি তো কোন মেশিন না যে তারাতারি সব কাজ করব। কিন্তু আমার সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করা হতো। ওনারা আমারে সমানে বেলন দিয়ে, লোহার ইয়া (খুনতি) দিয়া মারে, আর চর-থাপ্পর তো আছেই। এমনভাবে মারে যে পরে আমি উইঠা আর কাজ করতে পারি না ‘
তিনি বলেন, এককাজ চৌদ্দবার করাতো। কাজে দেরি হলেই হাঁটু ও মাজায় পেটাতো। সব সময় পঁচা-বাসি খাবার দিত। আবার খাওয়ার জন্যও সময় বেধে দিত। ওনাদের মারধরের কারণে আরেকটা মেয়ে ছিল, সে চলে গেছে।
মিম পালানোর বিষয়ে বলেন, বাসার গেট খোলা পেয়ে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিএম কলেজের সামনে চলে আছি। কিন্তু এখানকার কিছু না চেনায় একজন নারীর সাহায্য চাই। ওই আন্টিকে খ্রিষ্টান কলোনিতে দিয়ে আসার অনুরোধ জানাই। তিনি তখন রিকশাচালক আরিফ ভাইকে খ্রিষ্টান কলোনিতে দিয়ে আসতে বললে আমি এখানে আসি।
নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকায় কবির হাওলাদারের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও রিকশাচালক আরিফ মোল্লা বলেন, বিএম কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এক নারী আমাকে সিগন্যাল দেয়। এরপর এই মেয়েটিকে বাঁচানোর কথা বলে।
মেয়েটিও আমাকে ভাই বলে ডাক দিয়ে সাহায্যের আকুতি জানায়। এরপর তাকে নিয়ে হাজেরা খাতুন স্কুলের সামনে এসে চা-রুটি খাওয়াই। তারপর সে ভাত খেতে চাইলে বাসায় নিয়ে আসি। পরবর্তীতে সে খ্রিষ্টান কলোনিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। তবে না জেনে আমি কোথায় নেব- সেই চিন্তায় বাসায় স্ত্রীর কাছেই রাখি তাকে।
আরিফের স্ত্রী হাফিজা জানায়, আমি কাজ থেকে বাড়িতে আসছি আর তার স্বামীও ওই মেয়েটিকে নিয়ে বাসায় আসে। তখন মেয়েটির কাপড়-চোপড় খুব নোংরা ছিল। যার কারণে আমার কাপড় তাকে ভাত খেতে দেই। খাওয়া শেষে বিশ্রাম নেয় সে।
এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করলে জানায় এক বাসায় কাজের জন্য তাকে নির্যাতন করা হতো। সবসময় তালা দিয়ে রাখা হতো, সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছে।
তবে বরিশাল নগরে অবিস্থত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্যামিস্ট ল্যাবরেটরির চিফ অপারেশন অ্যাডমিনেস্টেটর পদে কর্মরত মিমের গৃহকর্তা আকিমুল ইসলাম এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, মিমকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। গাজিপুরে চাকরি করার সময়ে এক লোকের মাধ্যমে মিমকে তিনি পেয়েছেন। আর বরিশালে মাত্র ৩ মাস হয়েছে তিনি এসেছেন, সব মিলিয়ে ৬-৭ মাস হতে পারে মিম তাদের সঙ্গে আছেন।
মিমের মানসিক সমস্যা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মিম তার বাড়ির ঠিকানা নেই, বলতেও পারে না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তার বাড়িতে যোগাযোগ করার জন্য। তবে বৃহস্পতিবার হারিয়ে যাওয়া বা আগে থেকেই তার পরিবারের সন্ধান না পাওয়ার বিষয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়নি।
২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহম্মেদ বলেন, রিকশাচালক আরিফের বাড়িমালিকের কাছ থেকে খবর পেয়ে থানা পুলিশসহ আমরা এখানে এসেছি। এখন মেয়েটি যাতে ভালো থাকে আমরা সেই চেষ্টা করব। আর নির্যাতনকারীদের উচিৎ আইনের আওতায় আনা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মো. শাহজালাল কবির জানান, বিমানবন্দর থানা পুলিশ মিমকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভিকটিম সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য মেয়েটি তার বাড়ির ঠিকানা ঠাকুরগাঁওয়ের তুলশী পুকুর এলাকায় বলে জানিয়েছে। বাবার নাম অরেন, আর মায়ের নাম আনিকা।