১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জয়পুরহাটে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, ডা. আজিজার রহমান (৯৪) তাদের মধ্যে অন্যতম। ভাষা সংগ্রামের ৭০ বছর পার হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই তার কোনো খোঁজ রাখেনি। এ জেলায় ভাষা সৈনিকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই জীবিত রয়েছেন।
বার্ধক্যের কারণে ঠিকমত কথা বলতে পারেন না। চলাফেরাও করতে পারেন না। অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে অনেকেই তার খোঁজ-খবর করেন। তারপর আবার এক বছরের জন্য ভুলে যান। জীবন সায়াহ্নে এসে এই সংগ্রামী মানুষটি আর কিছুই চান না। তার একমাত্র চাওয়া ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি।
আজিজার রহমান ১৯২৮ সালের ৪ মার্চ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঝারঘড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। নবম শ্রেণিতে থাকতে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যান্য স্থানের মত আক্কেলপুরেও ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেকের সঙ্গে তিনিও নেতৃত্ব দেন।
৬ দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, অসহযোগ, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, অবশেষে ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে রেখে এসেছেন সংগ্রামী স্মৃতি।
১৯৭১ সালে তিনি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ভারতে যান। আসামের তেজপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ২০০০ সালের ৭ অক্টোবর প্রকাশিত মুক্তিবার্তায় তার নাম উল্লেখ আছে।
ব্যক্তিগত জীবনে ডা. আজিজার সৎ, নির্লোভ ও দেশ প্রেমিক ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ। দুই বার কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে। তিনি আক্কেলপুর আর্দশ ক্লাব ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা। হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক আজিজার নিজ এলাকায় ডাক্তার নামেই পরিচিত।
ডা. আজিজার রহমান বলেন, ‘বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না এখনও। অপ-সংস্কৃতির কবলে পড়ে হারিয়ে যেতে চলেছে বাংলা ভাষার গৌরব।’
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভাষা সৈনিক হিসেবে স্থানীয় কিছু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তবে জাতীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি মেলেনি তার।
ডা. আজিজার রহমানের ছেলে উজ্জল হোসেন ও মেয়ে রীতা আক্তার জানান, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারের অনেক দপ্তর তাদের বাবার খোঁজ নেয়। তবে অন্য সময়ে কেউ তার খোঁজ রাখেন না।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সৈনিক আজিজারের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’