নবজাতকের মাথা কাটার বিষয়টি স্বাভাবিক, বললেন সেই ডাক্তার

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

নাজমুল হোসেন নামে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব করানোর সময় নবজাতকের মাথা কেটে ফেলার। পরে শিশুটির মৃত্যু হয়। যদিও এ চিকিৎসকের দাবি ঠান্ডাজনিত কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিটেক একতা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকের ছুরিকাঘাতে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।

নবজাতকের চাচা মো. মাসুম মিয়া জানান, ডাক্তারের ছুরিকাঘাতে মাথা কেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তার ভাতিজির মৃত্যু হয়। এ জন্য তারা ডাক্তার ও ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজমুল হোসেন জানান, মামলা করতেই পারেন তারা। তবে এ মামলা টিকবে না। আমি কোয়ালিফাইড পার্সন। সব কিছু বুঝি।

তিনি আরও বলেন, জরায়ুর মুখ কাটতে গিয়ে নবজাতকের মাথায় একটা অংশে আঘাত লাগে। মেয়ে শিশুর মাথায় দাগটা থাকলে খারাপ লাগবে এ জন্যই সেলাই দেয়া হয়েছিল। ছেলে সন্তান হলে দিতাম না।

তাহলে স্বজনদের কাছে মাথা কাটার বিষয়টি গোপন করেছিলেন কেন জানতে চাইলে এ চিকিৎসক বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্বজনদের জানানো হয়েছে।

ঘটনার পর গণমাধ্যম কর্মীরা ফোনে যোগাযোগ করায় বিরক্তি প্রকাশ করেন ডা. নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, সহজ ও স্বাভাবিক একটি ঘটনাকে বড় করে দেখা হচ্ছে। তবে নবজাতকটির মৃত্যুর ঘটনায় আমি নিজেও দুঃখ পেয়েছি। তবে এটি স্বাভাবিক বিষয়।

পেশাগত বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজমুল বলেন, আরও অনেক বিষয় আছে। সেগুলো নিয়ে নিউজ করেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ক্লিনিকে সেবা দিতে যাই। এগুলো নিয়ে টানাটানি করলে ক্লিনিকে সেবা দেয়াটা বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি জানান, ২০০৭ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ৩০তম ব্যাচে বিসিএস সম্পন্ন করেন। একতা ক্লিনিকে সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার রোগী দেখতেন তিনি। ঢাকায়ও তার চেম্বার রয়েছে। বর্তমানে ডিজি হেলথে প্রেষণে আছেন তিনি। তবে তার ফেসবুক প্রোফাইলে চিকিৎসকের কোনো তথ্য নেই।

সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জরুরি কল পেয়েই তিনি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য মানিকগঞ্জের একতা ক্লিনিকে যান বলে জানান।

জেলা সিভিল সার্জন মো. খুরশীদ আলম জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মিনহাজ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে নবজাতকের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালিরটেক ফেরিঘাট সংলগ্ন একতা ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যবসায়ী স্বপন মজুমদার। তার স্ত্রীর বোনের জামাই ফারুক হোসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লিনিকের অন্যান্য পরিচালকও স্বপন মজুমদারের পরিবারের সদস্য। স্বপন মজুমদার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকায় গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে তার।

প্রসঙ্গত, সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া গ্রামের মিশুক রানার স্ত্রী মাকুসুদার সিজিরিয়ান অপারেশন করে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করানো হয়।

অপারেশনের সময় নবজাতকের মাথার একটি অংশ কাটা পড়ে। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখা হয় স্বজনদের কাছে। তুলা ও তোয়ালে দিয়ে শিশুটির মাথা ঢেকে দেয়া হয়।

জন্মের সাত ঘণ্টা পর নবজাতকের মৃত্যু হয়। দাফনের জন্য গোসল করাতে গেলে মাথার ক্ষত দেখতে পান স্বজনরা। পরে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে ক্লিনিক ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।