প্রশ্নফাঁস: সেই নারী ভাইস চেয়ারম্যানকে আ’লীগ থেকে অব্যাহতি

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেত্রী মাহবুবা নাসরিন রুপাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরিন রুপার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

মাহবুবা নাসরিন রুপা বগুড়া জেলা ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভুঁইপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের মেয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার বাবা আতাউর রহমান ঢাকাতে দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। নিজ এলাকায় প্রাথমিক শেষ করে ঢাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করেন।

মাহবুবা নাসরিন রুপা ইডেন কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের দাপুটে নেত্রী ছিলেন। প্রথমে কলেজ ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম- আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন। ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সময় হলের সিট-বাণিজ্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্স) অর্জনের পর বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি হঠাৎ করেই ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ায় এসে ১৪ দল মনোনীত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামেন। পরে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হওয়ার পর এলাকায় তার পরিচিতি প্রকাশ পায়। ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক পরিচয়ে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামেন। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তার পর শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তার দাপট। নির্বাচনে জিতে শপথ গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ইশারায় উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য বলেন, রুপার হস্তক্ষেপেই তখন হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে।

রূপার বড় বাবা (চাচা) সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়াশুনার সময় ঢাকার জিরানি বাজার এলাকায় একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রুপার। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বাবা-মা না থাকায় এবং ছোট বোন শিউলি স্বামীর বাড়িতে এবং ছোট ভাই রকি ঢাকায় লেখাপড়ার কারণে মাঝে মধ্যেই রূপা আমার বাসায় অবস্থান করতো।

এ বিষয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কমিটির প্রাথমিক সদস্য পদে রুপার নাম ছিল, কিন্তু চূড়ান্ত কমিটিতে তার কোনো সদস্য পদ নেই।

তিনি আরও বলেন, অপরাধ যেই করুক না কেন দল কোনো দায়িত্ব নিবে না।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, মাহবুবা জেলা আওয়ামী লীগ এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিল। রোববার তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রুপা গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মহা-হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।