নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুটি মারা গেলো কীভাবে?

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল ছয় মাস বয়সী জমজ দুই ভাই- আহমেদ ও আব্দুল্লাহ। দুই শিশুকে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন মা আয়েশা বেগম।

অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশু দুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার কথা বলেন সোহরাওয়ার্দীর চিকিৎসকরা। তবে সেখানে আইসিইউ বেড না থাকায় ছোটাছুটি শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে এক দালাল তাকে কম খরচে একটি হাসপাতালে আইসিইউ আছে, এমন তথ্য দেয়।

আয়েশা বেগমের দাবি, ওই দালালের সহায়তায় গত ২ জানুয়ারি জমজ দুই সন্তানকে রাজধানীর শ্যামলীর ‌‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ নেন তিনি। সেখানে তিনদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার পর তাকে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা বিলের কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ওই টাকা যোগাড়ের সাধ্য নেই জানানোর পর আয়েশার সঙ্গে রাগারাগি করেন হাসপাতালের পরিচালকসহ দায়িত্বে থাকা অন্য কর্মকর্তারা।

এই নারী দাবি করেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা যোগাড় করেন তিনি। এছাড়া সৌদি প্রবাসী স্বামীকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক তিনি ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠান। সব মিলিয়ে ৬০ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তবে তাতে সন্তুষ্ট হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

যদিও হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, শিশুর মা এক টাকাও বিল দেননি। অন্যদিকে, পুলিশ বলছে বাচ্চা দুটির মা মাত্র চার হাজার টাকা বিল দিয়েছেন।

আয়েশা বেগমের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) হাসপাতালের আইসিইউ থেকে জমজ দুই শিশুকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় শিশু আহমেদ। আরেক শিশু আব্দুল্লাহও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাতে আয়েশা জাগো নিউজকে আরও বলেন, ওদের বাবা সৌদি আরবে থাকেন। বাচ্চারা অসুস্থ হওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। এত টাকা আমি কোথায় পাবো? আইসিইউ থেকে বের করে দেওয়ার পরেই আহমেদ মারা গেছে। আব্দুল্লাহর অবস্থাও গুরুতর।

আয়েশা বেগমের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। তার স্বামী মো. জামাল হোসেন সৌদি আরবে থাকেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় বসবাস করেন। জামাল-আয়েশা দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক সোয়েব খাঁন বলেন, ‘বাচ্চা দুটোর নিউমোনিয়া ছিল। আমাদের এখানে যখন আনা হয়, তখন বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ ছিল। সকালে আমি বাচ্চার মাকে ডেকে বলি, আপনি আমাদের এখানে ভর্তি ফিও দেননি। ভর্তি ফিসহ কিছু ফি-এর টাকা জমা দেন। তবে উনি দেননি।’

তিনি বলেন, ‘শিশুর মা এক টাকাও আনেননি। তিনি জমির দলিল জমা দিতে চান এবং বলেন, আপনারা তো আমাকে বিশ্বাস করছেন না, তাহলে জমির দলিল রাখেন। এতে আমরা কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলাম। পরে তাকে আমি অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বলি। শিশুদের স্থানান্তরে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথাও বলেছি।’

সোয়েব খাঁনের দাবি, ‘শিশুর মা মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। থানা থেকে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম আসে। পুলিশ হাসপাতালে আসলে বসে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। অর্ধেক বিল দিয়ে অন্য কোনো হাসপাতালে শিশুদের স্থানান্তরে রাজি হয় শিশুর মা। শিশুদের অন্য হাসপাতালে ট্রান্সফারে আমরা সব ধরনের সহযোগিতাও করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল জাগো নিউজকে বলেন, ঢামেকে মারা যাওয়া শিশুটি ভর্তি ছিল আমার বাংলাদেশ নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। হাসপাতালটি মোহাম্মদপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় (বিল নিয়ে বচসার সময়) আমাকে খোঁজ নিতে বলা হয়। আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি গত ২ জানুয়ারি জমজ শিশু দুটি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। অসুস্থ হওয়ায় জমজ শিশু দুটির আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়। এরপর সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে চারটা পর্যন্ত ভর্তি ছিল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাতেই তিনি বলেন, চারদিন ভর্তি থাকার পরে হাসপাতালে মোট বিল আসে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাচ্চা দুটির মা সিদ্ধান্ত নেন বিল বেশি আসার কারণে তার শিশু দুটির এখানে চিকিৎসা করাবেন না। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন। বাচ্চাদের কোনো সমস্যা হলে দায়-দায়িত্ব এই হাসপাতালের নয়, এমন লিখিত দিয়ে তিনি ঢামেকে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাচ্চা মারা যায়।

এসআই সাইফুল আরও জানান, বাচ্চা দুটির মা মাত্র চার হাজার টাকা বিল দিয়েছেন। বাকি টাকা পরিশোধ না করে মাফ চেয়ে চলে যান।

হাসপাতালের বিল মওকুফের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের বিল সমঝোতার বিষয়ে আমরা কোনো দায়িত্ব নেইনি। তবে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে যদি বাচ্চার মা লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ঢাকা মেডিকেলে দুই শিশুকে আনার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আরেক শিশুকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে।