দেশকে আরও এগিয়ে নিতে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তির চূড়ান্ত পতন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি। বিএনপি-জামায়াত যদি গত ৫০ বছর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নিয়ে নেতিবাচক, প্রতিহিংসাপরায়ণ, পেট্রলবোমা আর সন্ত্রাসী অপরাজনীতি ষড়যন্ত্র না করতো, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে অপপ্রচার না চালাতো, তাহলে দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যেতো।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর-ডিএফপি আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫০ বছর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘শুধু আজ নয়, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ এমন মন্তব্য করে ড. হাছান বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশে আর কোনো মানুষ খুঁজে পাননি, সেই শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের উপপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে গিয়ে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না, কোনো গণহত্যা হচ্ছে না, সেখানে ভারতীয় কিছু চর গণ্ডগোল করছে মাত্র।
এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান রাজাকারদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছিলেন, বেগম জিয়ার সময় গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। যারা এ দেশটাই চায়নি, যারা চাঁদ-তারা পতাকার পক্ষে এদেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেই মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদদের খালেদা জিয়া মন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর নিবিড় সম্পর্কে যুক্ত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ধারণকারী ও দেশের সংবিধানের প্রথম হস্তলিপিকার এই অধিদপ্তরেরই চাকুরে ছিলেন এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে এই অধিদপ্তরেই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কার্যালয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা শাহেনুর মিয়া, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিধান চন্দ্র কর্মকার, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ডিএফপি পরিচালক মোহাম্মদ আলী সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’।
এর আগে দুপুরে তথ্যমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সদ্য প্রয়াত শিল্পী শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এসময় তিনি মরদেহের পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শহীদজায়ার আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের ড. হাছান বলেন, বেগম মুশতারী শফী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখায় স্বামী ডা. শফীকে পাক সেনারা হত্যা করেছিল। মুশতারী শফীর ভাইকেও হত্যা করা হয়েছিল। এরপরও তিনি দমে যাননি। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি।
মুশতারী শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও আমাদের আবহমান সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তা লালন করেছেন মুশতারী শফী। তিনি চট্টগ্রাম উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিসেবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠককে হারালো। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।