‘কিশোর গ্যাং’ এর অপরাধের ব্যাপারে দেশের যুব সমাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আজ-কাল প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের খবর প্রচারিত হয়। এতে অনেক যুবকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারেও যুব সমাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সোমবার (১ নভেম্বর) জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সম্ভাবনার পাশাপাশি যুব সমাজের সামনে চ্যালেঞ্জও অনেক। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাব, অপরাধ ও সহিংসতা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়।’
যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শুধু নিজে ভালো থাকলে চলবে না, অন্যরাও যাতে ভালো থাকে সে চেষ্টাও করতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকদেরও তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা যাতে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় যুব সমাজের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তারা (যুব সমাজ) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে সে বিষয়ে আমার গভীর আস্থা রয়েছে।
যুবদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাহসিকতা আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। আমার বিশ্বাস সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের ধ্যান-ধারণা ও আগ্রহ অন্যদেরও শক্তি যোগাবে এবং দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের অভিযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য। কোভিড-১৯ এর সর্বগ্রাসী ভয়াবহতা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার আমাদের বিপুল যুবসমাজের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের অমিত সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে অবশ্যই উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাবতীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, কর্মসম্পাদনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের’ সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল এবং মানবসম্পদের শ্রেষ্ঠ অংশ যুবসমাজ।
আমাদের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ, যা সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে আমাদের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের’ সদ্ব্যবহার করা।
সে জন্য যুবদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকার যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে তাদের মানবসম্পদে পরিণত করছে। ফলশ্রুতিতে তারা কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।’
অনুষ্ঠানে ২৭ জন সফল আত্মকর্মী ও সংগঠককে জাতীয় যুব পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পদক ও বিভিন্ন অঙ্কের চেক দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার তুলে দেন।
আত্মকর্মী (সারা দেশে) ক্যাটাগরিতে তিন জন, বিভাগীয় কোটায় প্রতি বিভাগে দুজন করে আট বিভাগের মোট ১৬ জন, নারী কোটায় একজন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক) কোটায় একজন ও ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী কোটায় একজন আত্মকর্মী এ পুরস্কার পাবেন। এছাড়া যুব সংগঠক কোটায় পাঁচ জনকে জাতীয় যুব পুরস্কার দেওয়া হয়।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাসচিব আজহারুল ইসলাম খান।