সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মধ্য আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলা শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম।
এ মৌসুমে পূর্ণিমা তিথিগুলোতে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে চলে আসে। এ সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
সনাতন ধর্মের (হিন্দু) পঞ্জিকানুসারে গত ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে পূর্নিমা শুরু হয়ে শেষরাত ৫ টা ২৭ মিনিট পূর্নিমা ছিল।
আশ্বিনের এ পূর্নিমায় বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়ার কথা। কারণ পূর্নিমা তিথিতে ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ গভীর সমুদ্র থেকে নদীতে চলে আসে।
এসময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে। কিন্তু এবারের ভরা মৌসুমের পূর্নিমা তিথিতে আশানুরুপ ইলিশ মিলছে না। আবার বাজারে দামও বেশি।
জেলা মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩৭৭৫ দশমিক ০১ মেট্রিক টন ইলিশ উঠেছে।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭০০ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ৩০২১ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১০০ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ২৯১১ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ হাজার ৭৫৯ মেট্রিক টন কমে গিয়ে ইলিশ উঠেছে ১১৫২ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন।
জেলার পাথরঘাটায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যানুসারে , গত ৪ বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত হারে ইলিশের পরিমাণ কমে এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে।
অন্যদিকে, ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে বরগুনার তিনটি নদী ও মোহনাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
এবারের এ মৌসুমে জেলেদের জালে কম ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণ গ্রেডের (বড় সাইজের) ইলিশের দাম ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতাগী মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এখনও সময় আছে হয়তবা এ মৌসুমের সামনের দিনগুলোতে বেশি ধরা পড়বে। মাছ যা ধরা পড়ছে, এরচেয়ে চাহিদা বেশি থাকায়, দাম বেশি। ‘
এবার মৌসুমেও বেশি মাছ ধরা না পড়ায় ইলিশের দাম কমছে না । সরবরাহ অপেক্ষা চাহিদা বেশি হওয়ায় এখন ইলিশের দাম বেড়ে গেছে।
বেতাগী জেলে পাড়ার কমল দাস বলেন, অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সেই ঋণে টাকা ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছি না আমরা।’
ঝোপখালী গ্রামের জেলে লিটন হাওলাদার জানায়, ‘বিষখালীতে মাছের দেখা মেলেনি। যে মাছ প্রতিদিন পাই তাতে খরচের টাকাই ওঠেনি। এতে দৈনিক খরচের তুলনায় আয় না হওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।’
পৌর শহরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল রবিবার ও আজ সোমবার পৌর শহরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ১ কেজি ওজনের ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কেজিতে ৪ টি ইলিশের দাম সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত বছরের এ সময়ের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। যার কারণে সরবরাহ অপেক্ষা চাহিদা বেড়ে গেছে।
পৌর শহরের ইলিশ ব্যবসায়ী শাহিন হাওলাদার বলেন, গত কয়েক দিন মোকামে সাগরের ইলিশের আমদানি কমে গেছে। এ ছাড়া আমাদের বিষখালী নদীতেও কম মাছ ধরা পড়েছে।
তাই দাম অনেক বেড়ে গেছে। কিছু কিছু জেলেরা খুব কম পরিমাণ ইলিশ নিয়ে এলেও বেশির ভাগ ট্রলারই থাকে ইলিশ শূন্য।
উপজেলা মৎস্য সমিতির সভাপতি আব্দুর রব সিকদার বলেন, চাহিদার তুলনায় কম মাছ ধরা পড়ায় দাম বেড়েছে। তবে আবার বেশি মাছ ধরা পড়লে দামও কমবে।
জেলার বৃহৎ মৎস্য কেন্দ্র পাথরঘাটা থেকে আসা কয়েকজন আড়তদার জানান, গত বছরের মতো এ মৌসুমে ইলিশ জালে ধরা পড়ছে না।
যার কারণে ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। দামও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবে খুব শিগগিরই অনেক ইলিশ ধরা পড়বে। তখন আবার দাম কমে যাবে।
বেতাগী পৌর শহরের ইলিশ মোকামের কয়েকজন আড়তদার জানান, ইলিশ কম ধরা পড়ায় দাম বেড়েছে।