নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

আজ (শনিবার) ২১ আগস্ট। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। আজও সে আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকে।

রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তাঁর শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোটের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, একাত্তরের ঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী (মৃত্যুদণ্ডিত) মতিউর রহমান নিজামী, (মৃত্যুদণ্ডিত) আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা (মৃত্যুদণ্ডিত) মুফতি হান্নানসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নীলনকশায় সংঘটিত হয় নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ।

আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ সংক্রান্ত মামলার সঠিক তদন্ত হয়নি, ষড়যন্ত্রের হোতাদের রক্ষার উদ্দেশ্যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং আলামত ধ্বংস করার নানাবিধ ষড়যন্ত্র হয়েছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় গ্রেনেড হামলা মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হয়।

সময়ের পরিক্রমায় এ ঘটনা নিয়ে দুইটি মামলা চলমান থাকে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের মামলা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে আদালত ২১ আগস্ট দুই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জীবিত মোট ৪৯ আসামির মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পালাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক সমাবেশে যে ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই ভয়াল দিনটি বাঙালি জাতি কোনো দিন ভুলবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশের জনগণ ২০০৪ সালের পর থেকে ২১ আগস্ট দিনটিতে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এর মধ্যে আছে ২১ আগস্ট (শনিবার) সকাল সাড়ে ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ১০টায় হবে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে দলের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সারাদেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।