মোর কাছে ভালো দেশীয় বিভিন্ন ধরণের ফল পাইবেন। দামেও একেবারে বাজারের চেয়ে সস্তা এবং এতে নাই কোন ফরমালিন।
যেডা লয়েন বাইচ্চা ভালোডা লয়েন। মোর ফল ভালো না অইলে পরদিন আর মোর কাছ থেকে ফল কেনা দরকার নাই।
একথাগুলো বলেছিলো ক্রেতাদের সাথে ফল বিক্রেতা সজল আজ দুপুরে বরগুনার বেতাগী সরকারি কলেজ এলাকায়। তাঁর পুরো নাম সজল হাওলাদার। বয়স ৩০ বছর।
সজলের কাছে একান্ত আলাপচারিতায় জানা গেছে, উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত ছোট মোকামিয়া গ্রামের বর্গাচাষী সুরেশ চন্দ্র হাওলাদার ও গৃহিনী আকুল বালা’র ছেলে সজল।
পরিবারের তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সজলের অবস্থান তৃতীয়। অভাব অনাটনের সংসারে ২০০৫ সালে বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ ঘটে।
এরপর থেকে বাবা ও ভাইয়ের সাথে কৃষি কাজ করতো। কখনও দিনমজুরের কাজ। এতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ে।
ক্ষুদ্র ব্যবসা করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে ভ্রাম্যমান ফলের দোকান। এতে যেমন লাভবান হতে পেরেছে তেমনি সংসারের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হতে শুরু করে।
৫ হাজার টাকা দিয়ে তিন চাকাবিশিষ্ট একটি ভ্যান কিনে নেয়। ভ্যানের ওপর মৌসুমভিত্তিক কলা, কমলা, শসা, পেয়ারা, পেঁপে, কুল বরাই, সবেদা, চালতা, আম, জাম, কাঁঠাল, আঁতা, আনারস, আপেল ও আনারসহ বিভিন্ন ধরণের দেশীয় ফল সাজিয়ে রেখে দেয়।
ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এসব ফল বেতাগীর পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ও অফিসপাড়া, আবাসিক বাসা বাড়িতে বিক্রি করে।
এছাড়া কাজীরহাট, মোকামিয়া, বটতলা, বাসন্ডা, বদনীখালী, ঝোপখালী, পুটিয়াখালী, ফুলতলা, বিবিচিনি, কুমড়াখালী, চান্দখালী, জেলা সদর বরগুনা, পাশবর্তী কাকচিড়া, আমুয়া ও কাঠাঁলিয়ায় এসব ফল বিক্রি করে।
সংবাদকর্মী কামাল হোসেন খান জানান, বাজারের চেয়ে তাঁর ফল দাম কম এবং মান ভালো থাকায় চাহিদা রয়েছে। বিক্রি ভালো হচ্ছে এবং তাঁর ফলের চাহিদাও রয়েছে।
কলেজপাড়ার সুজন রায় জানায়,‘ তাঁর ফলের মান ভালো এবং দাম কম বিধায় অনেক চাহিদা রয়েছে।’ সজল জানায়,‘ সকল খরচের পড়ে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে।’
গত ৫ বছর পূর্বে পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার দৈহারী ইউনিয়নের গয়েশকাঠী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অতুল চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে নিপু রানী মন্ডলকে ধমীর্য় বিধান অনুযায়ী সাতপাকে বন্ধনে আবদ্ধ করে। তাদের ৩ বছরের প্রার্থণা হাওলাদার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
বিয়ের সময় নিপু রানী এসএসসি পাস করে। এরপর তাঁকে বেতাগী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক (পাস) করান।
স্ত্রীর পড়ালেখা এবং পরিবারের ৫ সদস্যও ভরণপোষণ সজলের ব্যবসা থেকে উর্পাজিত আয় থেকে বহন করতে হচ্ছে।
এ বিষয় সজল জানায়,‘ ঢাকার বাদামতলী ও খুলনা থেকে পাইকারি ফল কিনতে পারি । এজন্য অন্যদের চেয়ে কম দামে বেচতে পারি।
তিনি আরো জানায় , আমার স্ত্রীকে আমি পড়াইয়া এইচএসসি ও বিএ পাস করাইছি। এখন স্ত্রী নিপু একটা চাকুরি ভালো চাকুরি পেলে আমি খুব খুশী হবো।’