রাজধানীতে করোনায় মৃত রোগীদের লাশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিবহনের ঘোষণা দিয়েছে আল রশীদ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির হটলাইন নম্বরে (০১৮৪৪৬৬৪৪৫৬) যোগাযোগ করে নাম ঠিকানা জানালে স্বেচ্ছাসেবকরা ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
মৃতের স্বজনদের ইচ্ছানুসারে লাশ কবরস্থানে কিংবা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন তারা। আর স্বজনরা চাইলে বিনামূল্যে লাশ দাফন-কাফনেরও ব্যবস্থা করবে সংস্থাটি। আপাতত ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে লাশ পরিবহনের সুযোগ রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
করোনা মহামারিকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের লাশ পরিবহন ও দাফন-কাফনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি আল রশীদ ফাউন্ডেশন। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান হলো- আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। রাজধানীতে প্রতিদিন যত করোনা রোগী মারা যায় তার অধিকাংশই এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পরিবহন ও দাফন কাফন হয়ে থাকে।
আল রশীদ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও হজ অ্যাজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ প্রতিবেদককে জানান, করোনা মহামারিকালে যখন স্বজনরা আক্রান্ত ও মৃত্যুর অজানা আশঙ্কায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ঘনিষ্ঠ স্বজনের লাশের সামনে আসত না, দাফন-কাফনেও ভয় পেত তখন মৃতদেহ পরিবহন ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কাজ শুরু করেন তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রথমে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে লাশ পরিবহন ও দাফন শুরু করেন তারা।
তিনি আরও জানান, গত বছরের মে মাসে যাত্রা শুরু করে চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ২ হাজার ৪০০টি লাশ পরিবহন ও দাফন-কাফন করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন করোনায় যেসব রোগী মারা যাচ্ছে তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে তাদের জানানো হয়। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য ছুটে যান। লাশ পরিবহনের জন্য তাদের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, ৩০জন পুরুষ ও ৪ জন নারী স্বেচ্ছাসেবকের একটি নিবেদিত টিম রয়েছে।
নতুন করে বিনামূল্যে করোনা মৃতদেহ পরিবহনের ঘোষণার ব্যাপারে জানতে চাইলে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, তারা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে লাশ পরিবহন ও দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে আসছে তাদের প্রতিষ্ঠান। তারা জানতে পেরেছেন বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী ও তাদের নিয়োজিত দালালরা বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগী মারা গেলে লাশ পরিবহনের জন্য রোগীর স্বজনদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে। তারা অতিরিক্ত ভাড়ায় লাশ পরিবহন করে। করোনা রোগীদের মধ্যে অনেক অসহায় ও দরিদ্রও থাকে। তাদের জন্য টাকা খরচ করে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। মূলত এ শ্রেণির অসহায় ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতেই তারা বিনামূল্যে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে লাশ পরিবহনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আপাতত ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকবে এ সেবাটি। পাশাপাশি বিনামূল্যে লাশ দাফন-কাফনেরও ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।