ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছেন কট্টরপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসি। এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন রাইসি। তাকে ভোট দিয়েছেন ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ।
উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামাল অর্ফ জানিয়েছেন, ২ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ শুক্রবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভোটের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে রাইসিকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ৬০ বছর বয়সী রাইসি তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন। তাকে ২০১৯ সালে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত ইব্রাহিম রাইসি ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাসান রুহানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া রাইসি দেখিয়েছেন যে, ইরানে দুর্নীতি মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে তিনিই হবেন সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
তবে ১৯৮০-এর দশকে রাজনৈতিক বন্দীদের যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাতে রাইসির ভূমিকা নিয়ে বহু ইরানি এবং মানবাধিকার কর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইরান কখনো এই গণ-মৃত্যুদণ্ডের কথা স্বীকার করেনি এবং এতে রাইসির ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কখনো কিছু বলেননি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসির অধীনে কট্টরপন্থীরা ইসলামি অনুশাসন মেনে সরকার পরিচালনার ব্যাপারে আরও কঠোর হবেন যার অর্থ সামাজিক কার্যক্রমের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ, নারীদের কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতা কমে যাওয়া এবং সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে।
কট্টরপন্থীরা পশ্চিমাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করলেও রাইসি এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনি উভয়েই পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ফিরে যেতে আগ্রহী বলে ধারণা করা হয়। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার শর্তে দেশটির ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইরানের ওপর বেশ কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাধারণ ইরানিরা অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়েছে যার কারণে জনগণের মনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় চালু করেছে। চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ভিয়েনায় আলোচনা চলছে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও এই চুক্তি বাঁচিয়ে তুলতে আগ্রহী। কিন্তু উভয়পক্ষই বলছে যে, অন্যপক্ষকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।
ভোটের পর থেকেই কট্টরপন্থী নেতা ইব্রাহিম রাইসির জয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছিল। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। নাম উল্লেখ না করেই তিনি ‘জননির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অপরদিকে ভোটের ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর রাইসি বলেন, নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করায় ভোটারদের স্বাগত জানাচ্ছি।
নির্বাচনে রাইসির অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আব্দুল নাসে হেম্মতি। এক চিঠিতে তিনি সরাসরি রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আশা করি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে আপনার প্রশাসন ইরানকে গর্বিত করবে, জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে এবং জাতির মঙ্গল ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে। বিচারপতি রাইসিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরাও।