শনিবার দুপুর ১২টা। যাত্রী নিয়ে একটি রিকশা এসে থামল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে। রিকশার যাত্রী যুবক উঁকি দিয়ে কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পথশিশুকে ডাকলেন। এরপর কিছু একটা জিজ্ঞাসা করলেন।
পাশেই ফুটপাতে পলিথিন মুড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে বসেছিলেন এক হকার। রিকশাযাত্রী যুবকের কিছু কেনার আগ্রহের কথা কানে যেতেই পলিথিন সরিয়ে হকার বলে উঠেন- ‘কী লাগবে মামা?’
শুধু শহীদ মিনার সড়কের এই হকার নয়, শনিবার (১৯ জুন) রাজধানীজুড়ে দেখা গেছে ভাসমান হকার ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের এমন চিত্র।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ়ের শুরু থেকেই সারাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে। গেল কয়েকদিন ধরে ভারি বর্ষণ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
শুক্রবার (১৮ জুন) রাত থেকে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। শনিবার ভোর থেকে রাজধানীজুড়ে চলছে বিরামহীন বৃষ্টি। ঝিরিঝিরি এ বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।
আষাঢ়ের টানা এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বিশেষ করে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বেড়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রুটি-রুজির তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে কাকভেজা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তারা।
এদিকে, ছিঁচকাঁদুনে এ বৃষ্টিতে কর্মজীবী মানুষেরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। সকালে অফিসে উদ্দেশে বের হয়ে কাকভেজা হয়ে তাদেরকে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে। তবে বৃষ্টির ভোগান্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে যানবাহনের বাড়তি ভাড়া।
রাজধানীর জিগাতলার বাসিন্দা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সালাম মিয়া। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখায় টাকা জমা দিতে আসেন। ভেজা পোশাকে তাকে ব্যাংকের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুইদফা অফিসের বাইরে আসতে হয়েছে। একবার ছাতা নিয়ে বের হলেও আরেকবার ভুলে ছাতা রেখে ভিজতে ভিজতে বেরিয়ে পড়েছি।’
এদিকে, সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বৃষ্টিতে ভিজে ভাসমান হকাররা ফল ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করছেন। ক্রেতা না থাকলেও রুটি-রুজির তাগিদে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজছেন তারা।
তাদেরই একজন নীলক্ষেতের সবজি বিক্রেতা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে এনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিক্রি করি। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে বেচাবিক্রি একেবারে নেই। খুব কষ্টে দিন পার করছি। তবুও রুটি-রুজির তাগিদে বের হতেই হয়।’
এদিকে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ঢাকার দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬-১২ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।