এবাদত বন্দেগিতে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে কদর, করোনামুক্তির জন্য দোয়া

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

যথাযথ মর্যাদায় ও মাহে রমজানের ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যে এবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে কদর তথা লাইলাতুল কদর।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রোববার (৯ মে) রাতে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ঢল নেমেছে। সরকারি নির্দেশনা থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক মুসল্লি বাসা বাড়িতে একাকি নামাজ, এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে শবে কদর পালন করছেন।

মহিমান্বিত এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র এশার নামাজ, তারাবি শেষে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির্জনের জন্য নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকার, কবর জেয়ারত, দান-সদকা ও এবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন।

এর আগে পবিত্র এশা, তারাবি ও লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ শেষে আখেরি মোনাজাতে করোনাভাইরাসসহ বালা মুসিবত থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়েছে।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র এশার নামাজ ও তারাবি আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। বায়তুল মোকাররমে যৌথভাবে ইমামতি করেন পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকী নদভী ও ইমাম মহিউদ্দিন কাসেমি।

নামাজ শেষে দেশ ও জাতির জন্য দোয়া মোনাজাত করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকী নদভী।

মোনাজাতে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করে তিনি বলেন, হে আল্লাহ, পবিত্র রমজানের উসিলায় এই মহিমান্বিত রজনীতে তুমি আমাদের এই মহামারি থেকে মুক্তি দাও। যারা করোনায় মারা গেছেন তাদের জান্নাত নসীব করো। যারা অসুস্থ্য তাদের সুস্থ্য করে দাও। করোনা মহামারিসহ সব ধরণের বালা মুসিবত থেকে তুমি দেশ জাতি ও সারাবিশ্বকে পরিত্রাণ দাও। তুমি ছাড়া আমাদের রক্ষা করার আর কেউ নাই, তুমি একমাত্র রক্ষাকারী। আজকের এই পবিত্র রাতে তুমি আমাদের দোয়া কবুল করো। আজ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার রাত।

 

মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে তিনি বলেন, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের রোজা, এবাদত বন্দেগি কবুল করো। আমাদের মা-বাবাসহ সকলের গুনাহ ক্ষমা করো। আমরা তওবা করছি আল্লাহ, তুমি আমাদের মাফ করো। রমজানের পর গুনাহমুক্ত জীবন-যাপনের তওফিক দাও। বাংলাদেশকে সব ধরণের অশান্তি ও ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করো।

বায়তুল মোকাররমে অশ্রুসিক্ত নয়নে জিকির আজকার ও এবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শুধু বায়তুল মোকাররম নয় রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার মসজিদ, মিরপুর শাহ আলী মাজার মসজিদ, মহাখালী গাউছুল আজম জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা জামে মসজিদ, শাহজানপুর গাউছুল মসজিদ, কমলাপুর জামে মসজিদ, সায়েদাবাদ ফয়জানে জামে মসজিদসহ সারাদেশে মসজিদগুলোতে রাত যত বাড়ছে ততই মুসল্লির উপস্থিতি বাড়ছে। মুসল্লির ঢল নেমেছে হাইকোর্ট মাজার মসজিদসহ অধিকাংশ মসজিদে।

লাইলাতুল কদর উপলক্ষে সারারাত জেগে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তাহাজ্জুদ নামাজ, জিকির আজকার, সেহেরি-ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পবিত্র লাইলাতুল কদর।

শবে কদর’ হলো একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনও বেজোড় রাতে হতে পারে শবে কদর। এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)।

মাহে রমজানের এ রাতেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। তাই এ রাত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে এক পূণ্যময় ও মহিমান্বিত রাত হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে এ রাতের ইবাদতকে বিশেষ তাৎপর্যময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কদরের রাতে মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই লাইলাতুল কদরের রাতটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অনেক ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। এই রাতকে কেন্দ্র করে ‘কদর’ নামে একটি সুরাও নাজিল হয়।

নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দরুদ পাঠের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগি করছেন। নিজেদের গুনাহ মাফ, বরকত কামনাসহ দেশ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনায় চোখের পানি ফেলছেন মোমিন বান্দারা।