করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ১০ ব্যাংকারের মৃত্যু

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশজুড়ে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে বুধবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে। আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে এবার সংক্রমণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯৪ জন।

এবার কঠোর লকডাউনের মাঝে ব্যাংক বন্ধের ঘোষণার পর আবার খোলা, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকাররাও। কারণ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্য বরণ করেছেন মোট ১২ ব্যাংকার। উপসর্গ দেখা দিয়েছে আরও সহস্রাধিক কর্মকর্তার শরীরে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরুরি সেবা হিসেবে ব্যাংক খোলা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফিসে যাওয়া-আসা এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিপালন করা হয় না। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন তারা, সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অধিক কর্মী সমাগম ঠেকাতে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে জোর দেয়া উচিত।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা ও অন্যজন চট্টগ্রামের সিনিয়র ভাইস প্রিন্সিপাল পর্যায়ের কর্মী। গত ৮ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শরিফুল বারী মিল্টন। এর আগে গত ২১ মার্চ তার করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা। ব্যাংকের সেবা বিভাগে কর্মরত ওই কর্মকর্তার নাম আব্দুর রাজ্জাক ইউসুফজাই। ঢাকার এক হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। নিলফামারীতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একজন চালক মারা গেছেন একই সপ্তাহে। এছাড়া ব্যাংটির প্রধান কার্যালায়ের সহকারী-মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেনসহ আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

সরকারি রূপালী ব্যাংকে এখন পর্যন্ত কেউ মৃত্যুবরণ করেননি। তবে কয়েকজন কর্মকর্তা সংক্রমিত হয়ে রাজাধানীর বিভন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গত ৬ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহফুজুল ইসলাম (৪৮) নামে আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা মারা যান। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। মাহফুজুল ইসলাম উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নাজগ্রাম গ্রামের মৃত জাকের আলীর ছেলে।

৫ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে করোনায় মারা যান ফৌজিয়া জেসমিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ফৌজিয়া জেসমিন অগ্রণী ব্যাংক জামালপুর শাখায় এজিএম পদে কর্মরত ছিলেন। ৫ এপ্রিল ভোরে অগ্রণী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা মুহা. মুহিব্বুল্লাহ বাহার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি অগ্রণী ব‍্যাংক পাবনায় আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গত ৪ এপ্রিল মধ্যরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মহিদুল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য তাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যান তার পরিবারের সদস্যরা। কোথাও আইসিইউ বেড খালি না থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেননি তারা। পরে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে বিনাচিকিৎসায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি।

৩ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সহকারী মহাব্যবস্থাপক শামীমা ফেরদৌস শিমুল। শামীমা ফেরদৌস শিমুল রাকাবের মনিটরিং শাখা প্রধানের দায়িত্বপালন করছিলেন। তিনি রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

৩১ মার্চ ভোরে নাটোরে নিজ বাসায় মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংক নাটোর শাখার প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কনক। বেশকিছু দিন ধরেই কনকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। এর পর থেকে তিনি নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার ভোরে তিনি মারা যান।

৩০ মার্চ করোনায় মারা যান সিটি ব্যাংকের মিরপুর শাখার সিনিয়র অফিসার আতিয়া খানম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আতিয়া খানম ১৮ বছর সিটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।