জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে ডুবে যাওয়া নৌযান থেকে বেঁচে ফিরলেন চার শ্রমিক। মেঘনা নদীর রামদাসপুরের একটি ডুবো চর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় নিয়াজ (৪০) নামে একজন ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, তারা চারজন শ্রমিক বেলা সাড়ে ১১টায় সিমেন্ট বোঝাই একটি নৌযান (বাল্কহেড) নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। দুপুর আড়াইটায় তারা চাঁদপুর পৌঁছান। চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর ঝড়ের কবলে পড়েন। এরপর শুরু হয় তাদের জীবন-মরণ যুদ্ধ।
রোববার (১৪ মার্চ) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তীব্র স্রোত আর ঝড়ো হাওয়ায় শ্রমিকরা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেও নৌযান নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। এরপর তারা নিজেদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেন। বাতাস আর নদীর স্রোতের অনুকূলে তারা তাদের নৌযানটি রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঝড় আর নদীর স্রোত তাদের কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় তার কিছুই বুঝতে পারেননি।
এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে একটি ডুবো চরে আটকে তাদের নৌযানটি নিমজ্জিত হয়। তবে নৌযানটির একটি অংশ, যেখান থেকে নৌযান পরিচালনা করা হয় তার অংশ ভেসে থাকে। শ্রমিকরা কোনোমতে সেখানে বসে ছিলেন। এরপর তারা তাদের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলে তাদেরকে ৯৯৯ এ ফোন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
আনোয়ার সাত্তার আরও বলেন, ৯৯৯-এর জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কলারের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা। কারণ কলার তার অবস্থান জানাতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার দুই-আড়াই ঘণ্টা পর ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন।
এরপর ৯৯৯ প্রথমে চাঁদপুর নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানিয়ে কলারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। কলারের বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদপুর থেকে জানানো হয় ঘটনাস্থল বরিশাল হিজলার কাছাকাছি মেঘনা নদী হতে পারে।
এরপর ৯৯৯ বরিশাল নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানায়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ঝালকাঠিগামী নৌযানগুলোর নদী পথের একটি ধারণা পাওয়া যায়।
এরপর বরিশাল নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে হিজলা নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও কালীগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর হিজলা নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও কালীগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ি ৯৯৯-কে জানায় কলার ও তার সঙ্গীরা তাদের এলাকায় নেই। এরপর ভোলার পূর্ব ইলিশা নৌপুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হয় ভোর রাত ৩টায়। সংবাদ পেয়ে ভোর ৪টার একটু আগে পূর্ব ইলিশা নৌপুলিশ ফাঁড়ির একটি উদ্ধারকারী দল রওনা দেয়। সেই সঙ্গে কলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে থাকে ও সার্চ লাইটের আলো ফেলতে ফেলতে এগোতে থাকে। এরপর রোববার (১৪ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে পূর্ব ইলিশা নৌপুলিশ ফাঁড়ির উদ্ধারকারী দল কলার ও তার ৩ সঙ্গীকে খুঁজে পায়।
পূর্ব ইলিশা নৌপুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শরিফুল জানান, ঘটনাস্থল মেঘনা নদীর চর রামদাসপুর, তাদের ফাঁড়ি থেকে নৌপথে ৭/৮ কি. মি. দূরত্বে অবস্থিত ছিল। তারা চার শ্রমিককে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন এরপর তাদের প্রাথমিক শুশ্রূষা ও খাবারের ব্যবস্থা করে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা করেন। ইতোমধ্যে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ডের একটি উদ্ধারকারী দলও ঘটনাস্থলে হাজির হয়।