সালমান রহমান,কূটনৈতিক প্রতিবেদক:: শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানী তিরানায় প্রেসিডেন্সি ভবনে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ইলির মেতার কাছে রাষ্ট্রদূত জনাব আসুদ আহ্মদ আলবেনিয়ায় বাংলাদেশের অনাবাসী রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন।
পরিচয়পত্র পেশের পর আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাকে গ্রহণ করার জন্য আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান এবং তাকে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনে আলবেনিয়া সরকারের সার্বিক সমর্থন প্রত্যাশা করে তাঁর পূর্বসূরীর ন্যায় তাকেও সহযোগিতা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। এসময় তিনি বাংলাদেশ ও আলবেনিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ও আলবেনিয়া উভয়ই মুসলিমপ্রধান দেশ এবং ওআইসি -এর সক্রিয় সদস্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশেষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতিকে দুদেশের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন, পোশাকশিল্প ও জ্বালানিসহ অন্যান্য খাত সম্পর্কে অবহিত করেন। বাংলাদেশ সরকারের ব্যবসা ও বিনিয়োগ-বান্ধব নীতিমালা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা সম্পর্কে অবহিত করে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আলবেনিয়ার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার অনুরোধ জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে গণহত্যার মুখে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১.১ মিলিয়ন মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা)নাগরিককে মানবিক বিবেচনায় গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার যে অনন্য নিদর্শন বাংলাদেশ স্থাপন করেছে, সে বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে ফেরত নেয়ার বিষয়ে আলবেনিয়া সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আলবেনিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এসকল ফোরামের মাধ্যমে ও দ্বিপাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানান।
আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের উত্থাপিত বিষয়সমূহকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে এসকল বিষয়ে তার সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় তিনি বাংলাদেশকে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈশ্বিক অঙ্গণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে দুদেশের সম্পর্ক জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি কসোভোকে স্বীকৃতি দানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন,রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক আচরনের বিরুদ্ধে আলবেনিয়া সবসময় সোচ্চার ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে এবং জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরোমে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি সক্রিয় সমর্থনের আশ্বাস দেন।
এসময়, আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান এবং ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে আলবেনিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া তিনি নিজেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি রাষ্ট্রদূতের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেন এবং তার দায়িত্বকালে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বেগবান হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিচয়পত্র পেশকালে এবং বৈঠকে আলবেনিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কূটনৈতিক উপদেষ্টা, রাষ্ট্রাচার প্রধান ,রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী মিসেস রেবেকা সুলতানা এবং দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. খালেদ এবং উপস্থিত ছিলেন।