আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর জোট বিমসটেকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডের পাশাপাশি মিয়ানমারের জান্তা সরকারকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা।
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে লঙ্কান সরকার। অনেকের অভিযোগ, এর মাধ্যমে কার্যত মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। নতুন এই জান্তা সরকার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ধরনের স্বীকৃতি পায়নি। সামরিক বাহিনী নিযুক্ত মিয়ানমারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মং লুইন অনলাইন ও সশরীরে উভয়ভাবেই বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সভায় মিয়ানমার জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো শ্রীলঙ্কার আমন্ত্রণপত্র দেখেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
ওই চিঠিতে লঙ্কান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধনা বলেন, আপনার মূল্যবান অংশগ্রহণে ১৭তম মন্ত্রিপর্যায়ের সভা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। আমি সম্মেলনের সময় আমাদের নিবিড় যোগাযোগের প্রত্যাশায় রয়েছি।
শ্রীলঙ্কার এমন কাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন লঙ্কান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
সোয়েজতুন নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। তোমরা বার্মিজ সামরিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এক সদস্যকে বিমসটেক সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছ… তোমরা নির্লজ্জভাবে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বৈধতা দিচ্ছ।
হেইন মিন হোতায় নামে এক ব্যক্তি টুইটারে লিখেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে শ্রীলঙ্কার সমর্থন দেওয়া চীনের পর সবচেয়ে নিকৃষ্ট নির্লজ্জ আচরণ।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই। ধর্মীয় দিক থেকেও দুই দেশই বৌদ্ধপ্রধান।
অবশ্য বুধবার লঙ্কান রাজধানী কলম্বোয় মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করে কয়েক ডজন মানুষ। এসময় তাদের হাতে ‘জান্তা সন্ত্রাসীদের না বলো’, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে জান্তার বিচার করো’ লেখা ব্যানার দেখা গেছে।
গত মাসে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার। সেখানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ।
বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের সেনাশাসকরা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অন্তত ৬০ জন মারা গেছেন, আটক হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি গণতন্ত্রকামী।
সূত্র: দ্য স্টার