অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী বৈধ হবার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বাইডেন সরকার। ডেমোক্র্যাট নেতারা জো বাইডেনের অভিবাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার সিনেটে একটি বিল উত্থাপন করেন। বিলটি পাশ হলে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা প্রথমে বৈধ এবং পরে নাগরিকত্বের সুযোগ পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, এই বিরাটসংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা সেই সুযোগ দিতেই বিলটি এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়ে গত ৮ বছরে যা করতে পারেননি সেটা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এসব অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য অভিবাসন নীতি সংস্কার ‘দীর্ঘদিনের চাওয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, ‘পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভুল নীতি’ থেকে সরে আসার লক্ষ্য ছিল তাদের।’
বাইডেন প্রশাসনের আমলে উত্থাপিত নতুন বিলে লাখ লাখ অভিবাসীর আইনগত সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি জোর দেয়া হয়েছে। এসব অভিবাসীর বেশিরভাগ মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে যাওয়া, যারা অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাদের ব্যবসা, বাড়ি, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সন্তান ও নাতি-নাতনিও রয়েছে।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘অভিবাসন আমাদের শক্তির অপরিমেয় উৎস এবং এটা আমাদের জাতির জন্য অপরিহার্য।’ অভিবাসন নীতি সংস্কারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন নীতিগুলো উপযোগী করার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এটি। এটা পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলন ঘটাবে, আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত ও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হবে।’
নতুন এই বিলের প্রধান লক্ষ্য হলো, আগামী আট বছরে যুক্তরাষ্ট্রে কাগজপত্রহীন অবস্থায় বসবাস ও কর্মরত ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই অভিবাসীদের মধ্যে কৃষিশ্রমিক এবং শিশুকালে পরিবারের সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের (ড্রিমার্স) দ্রুত স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে অথবা বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে তাদের দেয়া হবে গ্রিন কার্ড।
এই বিলের প্রধান সমর্থক ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর বব মেনডেজ বলেন, ‘কাগজপত্রহীন ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীর সবাইকে অন্ধকার থেকে বাইরে আনার এখনই উপযুক্ত সময়। এই বিল অভিবাসীদের জীবনমানের যেমন উন্নয়ন ঘটাবে, তেমনি উন্নতি হবে দেশের অর্থনীতি ও অগ্রযাত্রার।’
অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, তাদের আশা বিলটি কংগ্রেসে পাস হবে। যদি পাস নাও হয় তাহলে বিকল্প উপায় বিবেচনা করতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকানো, বৈধ অভিবাসী কমানো এবং দশকের পর দশক ধরে বসবাস করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়িত করা।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন। অভিবাসীদের ঢল থামাতে সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণ, বৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন ও বিদেশি দক্ষ কর্মীদের ভিসা দেয়া কমিয়ে দেয়া হয়েছিল ট্রাম্পের শাসনামলে।