বহু ভাষা ও বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়ােজনে ইতালিতে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদায় ‘ শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘ পালন করেছে । ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়ােজিত দুইদিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ , জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধনমিতকরণ , বাণী পাঠ , ভাষা শহিদদের জন্য দোয়া ও মােনাজাত , আলােচনা সভা এবং বহুভাষা – ভিত্তিক একটি বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ০৭ টা ০১ মিনিটে বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মােঃ শামীম আহসান দূতাবাসের কর্মকর্তা – কর্মচারীদের সাথে নিয়ে অমর একুশের গানের ( আমার ভাইয়ের …… পারি ) সাথে সাথে দূতাবাসের প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন

এরপরে দূতাবাসের সভাকক্ষে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী , পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয় । বাণী পাঠ শেষে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মােনাজাত করা দ্বিতীয় দিনের ( ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ) কর্মসূচী শুরু হয় সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে । এরপরে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো – এর মহাপরিচালক এবং ইতালিতে নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয় । আলােচনা সভায় প্রবাসী বাংলাদেশী রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিদেশী নাগরিকগণের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । ইতালিয়ান প্রফেসর ড . ফ্রান্সেস্কো জানিনি ( Professor Dr. Francesco Zanini ) বাংলায় প্রদত্ত তাঁর বক্তব্যে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাভাষাকে প্রাণের খােরাক হিসেবে অভিহিত করেন ।

আলােচনা সভায় ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তিনজন অনারারি কনসাল জেনারেলও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন । বিদেশী নাগরিকদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পরে আমার মাতৃভাষা ‘ এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শীর্ষক দু’টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় । প্রামাণ্যচিত্রের পরে প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন । বক্তাগণ বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি বিদেশে তুলে ধরতে দূতাবাসের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন । রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যের শুরুতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং এই আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা তুলে ধরেন । ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন যে , এই আন্দোলনের ধারাবাহিক অর্জনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা । রাষ্ট্রদূত বলেন যে , ভাষার জন্য এই প্রাণদান বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ । ইউনেস্কো এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করে । বহু ভাষা ও সংস্কৃতি – ভিত্তিক বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়ােজনে বিদেশী শিল্পীরা ( ইতালি , থাইল্যান্ড , ভারত , নাইজেরিয়া , শ্রীলঙ্কা ) এবং স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীরা নৃত্য , সঙ্গীত ও আবৃত্তির মাধ্যমে সবাইকে মুগ্ধ করেন এবং একটি বহুভাষা – বহুজাতির সম্মিলনের বিরল আবহের সৃষ্টি হয় । উল্লেখ্য , কোভিড মহামারীর ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে ইতালি সরকার কর্তৃক আরােপিত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশু – কিশােরদের উপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দূতাবাসে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম ZOOM এ অনুষ্ঠানটি আয়ােজন করা হয় ।