১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , নিউইয়র্ক : “ কোভিড -১৯ অতিমারিজনিত সঙ্কটে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে অভিবাসী শ্রমিকগণ । এটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান অসমতা ও বৈষ্যমেরই প্রকাশ । পিছনে পড়ে থাকা মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযােগ তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়ােজন ” – গতকাল বিদ্যমান অসমত : এসডিজি’র কার্য – দশকে সকলের জন্য বর্ণবাদ , জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্য দূরীকরণ ‘ শীর্ষক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের ( ইকোসক ) উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ।
রাবাব ফাতিমা বলেন , কোভিড -১৯ অতিমারি সমাজের সকল স্তরকেই নাড়া দিয়েছে । এরফলে বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ , জাতিগত বিদ্বেষ , বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যসহ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দূরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । কেউ পিছে পড়ে থাকবে না ‘ – এই লক্ষ্য অর্জনে কোভিড -১৯ অতিমারি মােকাবিলার বিষয়টিকে অবশ্যই সামগ্রিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি । সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বাংলাদেশে কোভিড -১৯ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন যেখানে সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশকে পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ।
বাংলাদেশের জিডিপি’র প্রায় ৩.৭ ভাগের সমান ১৯ টি প্রণােদনা প্যাকেজ ঘোষণার বাইরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার । সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যেখানে নারী , অতিদারিদ্র্য , ভ্রাম্যমান জনগােষ্ঠী , ক্ষুদ্র নৃ – গােষ্ঠী , প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য দূর্দশাপীড়িত জনগােষ্ঠীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে । ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদ ও অন্যান্য বৈষম্য মােকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিনিয়ােগ করতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি । আর এই বিনিয়ােগের শুরু হতে পারে জাতি , মর্যাদা বা জাতীয়তা নির্বিশেষে সকলের জন্য কোভিড ভ্যাকসিনগুলাের সার্বজনীন প্রাপ্যতার সুযােগ তৈরি করার মধ্য দিয়ে ।
সকল অংশীজনদের আন্তরিক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দারিদ্র্য , সহিংসতা , বৈষম্য , বর্জন এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবসহ অসমতার মূল কারণগুলাে সমাধান করার আহবান জানান । তিনি শিক্ষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন যা সুযােগ ও সম্ভাবনা এনে দেয় এবং বর্ণবাদের দুষ্টু চক্র ভাঙ্গতে মানুষকে সহায়তা করে । তিনি কোভিড -১৯ এর সময়ে ডিজিটাল সুযােগ বঞ্চিত হওয়ার কারণে অনেক শিশুর পড়াশুনা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সকলকে আরও বেশী মনােযােগী হওয়ার আহ্বান জানান । রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন , লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ব্যতিত বর্ণবাদের মতাে সামাজিক কূফলগুলাে নির্মূল করা সম্ভব নয় কারণ এগুলাে সমাজের গভীরে প্রােথিত ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভিত্তিমূলে প্রতিষ্ঠিত – এমন একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে তিনি বলেন , সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের বহুমাত্রিক ধরণ নির্মলে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদেরকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে হবে । ইভেন্টটির আয়ােজন করে ইকোসক । এতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি , সিভিল সােসাইটির প্রতিনিধি , শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবর্গ অংশগ্রহণ করেন ।