একই মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই তারকা। সবধরনের ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজ ও বাঁ-হাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীস আবির। তারা দু’জনই পরবর্তী ক্যারিয়ারে যুক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভিন্ন ভিন্ন পদে।
শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের কথা জানিয়েছেন নাফীস ও রাজ্জাক। বিসিবি ও কোয়াবের পক্ষ থেকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক।
নিজের বিদায়ী সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন আব্দুর রাজ্জাক। চোখে জমে পানির ফোঁটা, কোনোমতেই তা ধরে রাখেন তিনি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্যটাও শেষ করেন খুব কম সময়ে। বক্তব্য শেষ করে চোখের পানি মুছতে দেখা যায় রাজ্জাককে।
অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া বক্তব্যের শেষটা তিনি টানেন এভাবে, ‘আমার জন্য আজকে খুব বেশি কিছু বলা একটু কঠিন। কারণ আমার জন্য অনেক বড় সিদ্ধান্ত এটি। সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন রাজ্জাক। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে পারার তৃপ্তি তার কণ্ঠে। কেননা দেশের অনেক সাবেক ক্রিকেটারই মাঠ থেকে অবসর নিতে পারেননি। তাই ঘোষণা দিয়ে অবসর নিতে পারার তৃপ্তি প্রকাশ করেছেন রাজ্জাক।
তার ভাষ্য, ‘আমাদের দেশে অনেক টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। অনেকে এই (আনুষ্ঠানিক অবসরের) সুযোগটাও পাননি। আমরা আশা করব, এরকম প্রচলন আস্তে আস্তে তৈরি হবে যেন আমরা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারি। দেশের জন্য যে এতকিছু করছে। জাতীয় দলে খেলা কিন্তু বিশাল ত্যাগের ব্যাপার। আপনাদের (সাংবাদিক) জন্যও ত্যাগের ব্যাপার। কারণ আমরা যতক্ষণ খেলি ততক্ষণ আপনারাও মাঠে থাকেন।’
রাজ্জাক আরও যোগ করেন, ‘ভালোর শেষ নেই। ভালো হচ্ছে মাঠ থেকে (বিদায়)। আগে তো এরকম সুযোগও আসত না। হঠাৎ করে একজন খেলোয়াড় বলত, আর খেলবে না। কেউ হয়তো জানতও না সে যে আর খেলবে না। এখন অন্তত মানুষ জানতে পারছে। এরপর থেকে আমাদের আশা থাকবে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার।’
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো হতাশা নেই বাঁ-হাতি স্পিনে প্রায় দুই দশক দেশের ক্রিকেট মাতানো রাজ্জাকের, ‘আমি হতাশ নই। আমার পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো হতাশা নেই। শুরু যেভাবে হয়েছে আমি খুশি ছিলাম, মাঝখানে যেমন চলেছে তাতে খুশির চেয়েও বেশি, আর শেষ যেভাবে হচ্ছে তাতেও আমি খুশি।’
উল্লেখ্য, ওয়ানডেতে দেশের প্রথম ২০০ উইকেট শিকারী আব্দুর রাজ্জাক ১৩টি টেস্ট (২৮ উইকেট), ১৫৩ ওয়ানডে (২০৭ উইকেট) এবং ৩৪টি টি-টোয়েন্টি (৪৪ উইকেট) ম্যাচ খেলেছেন ।
এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ ও লিস্ট এ ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে ৪০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি রয়েছে তারা। স্বীকৃত ক্রিকেটে ১ হাজার উইকেট নেয়া প্রথম বাংলাদেশি বোলারও তিনি।