নিজস্ব প্রতিবেদক:: বরিশাল জেলার মুলাদী পৌরসভায় সুষ্ঠ ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে দিনভর উত্তেজনা; রাতে পরিত্যাক্ত মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সেই উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণার মাইক নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই মাইক ফিরে পাননি তিন দিনেও।
এই পৌরসভায় রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে দ্বিতীয় শ্রেনীর এই পৌরসভায় মোট চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরমধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান মেয়র শফিকউজ্জামান রুবেল, উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল আহসান খান মোবাইল প্রতীক, বিএনপি সমর্থিত অধ্যাপক আল মামুন ধানের শীষ প্রতীক এবং ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকউজ্জামান রুবেল ও বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল আহসান খানের মধ্যে।
ভোটের মাঠে আধিপত্য ধরে রাখলেও শেষ মুহুর্তে শফিকউজ্জামান রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের দিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো এবং মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী দিদারুল আহসান খানকে প্রতিহত করার।
দিদারুল আহসান খান জানিয়েছেন, আমি নৌকার বিরুদ্ধে নই। আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমাকে ষড়যন্ত্র করে নৌকার বিরুদ্ধের লোক সাজানো হচ্ছে।
পৌরসভার সাবেক মেয়র শফিকউজ্জামান রুবেল কোন উন্নয়ন না করায় জনগন আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। সেই ভয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন শফিকউজ্জামান রুবেল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মাঝরাতে পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অকার্যকর; পরিত্যাক্ত একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে আমার ও আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তিনি জানান, ভোটের মাঠে তার কোন জনপ্রিয়তা নেই। সে কারনে আমি যেন মাঠে না নামতে পারি সেজন্য চক্রান্ত করে যাচ্ছেন।
এই প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমাকে শফিকউজ্জামানের লোকজন অবরুদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করছেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, রবিবার মুলাদীতে কোন অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটলে তার দায় তাকে (শফিকউজ্জামান রুবেল) নিতে হবে।
জানা গেছে, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে যে মোটরসাইকেলটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে সেটি নিকটস্থ একটি গ্যারেজের। ৭ নং ওয়ার্ডের দুলাল ও হারুন নামের দু’জন ব্যাক্তি মাঝরাতে অকার্যকর সেই মোটরসাইকেলটিতে কাঠ ও পেট্রোল দিয়ে আগুন দেন।
মেয়র প্রার্থী দিদারুল আহসান খান বলেন, অকার্যকর সেই মোটরসাইকেল ও কিছু কাগজপত্র-কাঠে আগুন দিয়ে মেয়র রুবেলের লোকজন ডাক-চিৎকার দিয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করেছেন যাতে ভোটাররা ভয় পান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা আগুন দিয়ে আমার সমর্থকদের দূষছেন। এই প্রার্থীর দাবী, বহিরাগত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, গৌরনদীর মেয়র হারিছুর রহমানসহ বিভিন্ন লোক এসে এখানে গণসংযোগ করছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও কোন প্রতিকার পাইনি।
নির্বাচনের মাঠে নামতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আল মামুন। তিনি বলেন, বুধবার পৌর শহরে আমার প্রচারণার মাইক বন্ধ করে, মাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা। আর বৃহস্পতিবার আমার প্রচাররণার মাইক নামতে দেয়নি বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা চেয়ারম্যানবৃন্দ। নির্বাচনী নির্দেশনা লঙ্ঘন করে জনপ্রতিনিধিরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আজও আমাকে ভোট চাইতে নামতে দেয়নি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা।
এই প্রার্থী দাবী করেন, শুরুতে ভোটের মাঠে সমতা ছিল। দিন যত যাচ্ছে ততই পরিবেশ খারাপ করে দিচ্ছেন শফিকউজ্জামান রুবেলের লোকজন। আমার মনে হয় রবিবার সুষ্ঠ ভোট হবে না।
যদিও মুলাদী উপজেলা রিটার্নিং অফিসার সোহেল সামাদ জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধান মতে ভোটের ৩২ ঘন্টা পূর্বে ভোটার ছাড়া কেউ নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবে না। আমরা সেটি নিশ্চিত করেছি। মুলাদী পৌর এলাকায় এখন বহিরাগত কেউ নেই। এই কর্মকর্তা বলেন, ভোট চাইতে বিভিন্ন সময়ে প্রার্থীর দলের লোক, আত্মীয় স্বজন আসে। সেটি অবৈধ নয়। তবে এখন আর তারা কেউ নেই। সোহেল সামাদ বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি মুলাদী পৌরসভায় নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
মুলাদী থানার ওসি আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগের একটি অভিযোগ এসেছে। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহন করা হয়নি। অভিযোগটি প্রাথমকিভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে আসলে কি ঘটেছিল। তদন্ত শেষে বলা যাবে অভিযোগটি মামলা হবে কিনা। এই কর্মকর্তা বলেন, পৌর শহরের কোথাও এখন কোন উত্তেজনা নেই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ভোটেও কেউ প্রভাব খাটাতে পারবেন না বলে আশ্বস্ত করেন আফজাল হোসেন।