প্রেমিকাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর হামলার শিকার প্রেমিক

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় প্রেমিকাকে রক্ষা করতে গিয়ে রফিক সরদার (২৫) নামে এক হামলাকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাসিক হাওলাদার (১৭) নামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে হামলার পরপরই বখাটে রফিক সরদার (২৫) আত্মগোপন করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রফিকের মা রানু বেগম ও ভগ্নিপতি শাখাওয়াত হোসেনকে আটক করেছে।

আহত রাসিক হাওলাদার উপজেলার কমলাপুর গ্রামের ওমান প্রবাসী নজরুল হাওলাদারের ছেলে ও খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হামলাকারী রফিক সরদার গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী এলাকার সিরাজ সরদারের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, রাসিক হাওলাদার তার স্কুলের একই ক্লাসের এক ছাত্রীর (১৬) সঙ্গে গত চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে আসছে। রাসিক টরকী বন্দরের সুন্দরদী এলাকায় তার মামার শ্বশুর (নানা) আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে প্রেমিকাকে নিয়ে মাঝে মধ্যে গোপনে বেড়াতে যেত। আনোয়ার হোসেনের প্রতিবেশী রানু বেগম ও তার ছেলে রফিক সরদার বিষয়টি ভাল চোখে দেখতেন না। বৃহস্পতিবার সকালে রাসিক তার প্রেমিকাকে নিয়ে সুন্দরদী এলাকায় ওই বাড়িতে ফের বেড়াতে যান।

ওই বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ একান্তে সময় কাটায় তারা। দুপুরে বিষয়টি টের পেয়ে রানু বেগম তার ছেলে রফিককে বিষয়টি জানালে রফিক ঘরে থাকা বটি নিয়ে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে যান এবং দরজা খুলতে বলেন। কিন্তু রাসিক ও তার প্রেমিকা ভয় পেয়ে দরজা খুলতে দেরি করে। এতে রফিক ক্ষিপ্ত হয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বটি দিয়ে রাসিকের প্রেমিকাকে আঘাত করতে যান।

এ সময় প্রেমিকাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রথমে রাসিক ডান হাত দিয়ে বাধা দেয়। এতে বটির কোপ গিয়ে রাসিকের ডান হাতের কব্জির ওপরে লাগে। এরপর আবার বটি দিয়ে কোপ দিলে রাসিকের বাম হাতে লাগে। এভাবে অন্তত ৫টি কোপ লাগে রাসিকের শরীরে। রাসিক একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় রাসিকের প্রেমিকার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে রফিক পালিয়ে যান। রাসিককে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হামলাকারী রফিক সরদারের মা রানু বেগম বলেন, রাসিক নামে ওই ছেলেটি তার প্রেমিকাকে নিয়ে প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমার ছেলে রফিক তাদের ওই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিল। তবে তারা রফিকের কথা না শুনে গালাগালি করে। এতে রফিক ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

গৌরনদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে তিনি একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, রাসিকের সঙ্গে ওই মেয়ের গত চার বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। তারা মাঝে মধ্যে ওই বাড়িতে আসত। সকালে রাসিক তার প্রেমিকাকে নিয়ে ওই বাড়িতে আসলে রফিক উত্তেজিত হয়ে দরজা ভেঙে বটি দিয়ে রাসিকের প্রেমিকাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। রাসিক বাধা দেয়ায় তার দুই হাতে ও শরীরে কোপ লাগে। একটি কোপ তার ডান হাতের কব্জিতে লেগেছে। এতে তার কব্জি হাত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবারের সদস্যরা আহত রাসিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ৯টার দিকে বরিশাল মেডিকেল থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান আরও বলেন, ঘটনার পরপরই রফিক আত্মগোপন করেছেন। তার সন্ধান ও ঘটনার কারণ জানতে রফিকের মা রানু বেগম ও ভগ্নিপতি শাখাওয়াত হোসেনকে রাতে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।