চলতি বছর পবিত্র হজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ৪৬টি হজ এজেন্সিকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে সৌদি সরকার। অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর ও মোনাজ্জেমের নাম উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে মতামত দাখিলের জন্য চিঠি দিয়েছে দক্ষিণ এশীয় হাজি সেবা সংস্থা (মোয়াচ্ছাছা)।
অভিযোগের কপি সৌদি হজ এবং ওমরাহ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করতে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের সেবা দেয়ার নামে অসহনীয় দুর্ভোগ ও নিদারুণ কষ্ট দিয়েছে। তারা হাজিদের খাবার না দিয়ে অভুক্ত রেখেছে। গাইড না দিয়ে হাজিদের একা রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। ফলে পথ ভুলে হজযাত্রীরা মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে। মক্কা থেকে মদিনাতে যাতায়াত এবং মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফাতে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা করতে যে ধরনের সহযোগিতা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা তার কিছুই দেয়নি।
সূত্র আরও জানায়, চলতি বছর সৌদি হজ মন্ত্রণালয় হাজিদের দুর্ভোগ দেখতে নিজস্ব গোয়েন্দা নিয়োগ করে। তারা অভিযুক্ত এজেন্সির হজযাত্রীদের মুখে নিদারুণ দুর্ভোগের কথা শুনে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে এজেন্সির নাম জমা দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মোয়াচ্ছাছা এজেন্সিগুলোকে মতামত দাখিল করতে নির্দেশনা দিয়েছে।
অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো হলো- এয়ার কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নিশান ওভারজিজ, হেজাজি হজ ট্রাভেলস্ অ্যান্ড ট্যুরস, ঢাকা হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলস, শাকের হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলস, মেসার্স এম নুর-ই-মদিনা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ইউকসেল প্রাইভেট লিমিটেড, খাজা এয়ার লাইনার ট্রাভেল ট্যুর, মতিয়া ট্রাভেলস, আল জিয়ারাহ ইন্টারন্যাশনাল, ম্যাগপাই ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মুনজিয়াত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, স্কাই ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ফারিহা ওভারসিজ, সাফুরা এয়ার সার্ভিসেস, বায়তুল্লা ট্রাভেলস সার্ভিসেস, রাজশাহী ট্রাভেলস, মদিনা ট্রাভেলস, আল বারাকাহ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আল জোবায়ের ট্রাভেলস এজেন্সি, সাউথ ইস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সেন্ট্রাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হাজী এয়ার মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এম এম ওহী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, গালফ ট্রাভেলস, কার্নিভাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আকবর ট্রাভেলস, মামুন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সোহাগি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, তাওসিফ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, আমানাহ বিজনেস সলিউশন, সাফুরা এয়ার সার্ভিসেস, আর বি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আন্তরিক ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, কাবার পথে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস্ লিমিটেড, এসডি হলি ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরস, জুবিলী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল আকসা ট্রাভেলস, এখলাস ট্রাভেলস অ্যান্ড হজ সার্ভিসেস, জান্নাত ট্রাভেলস, মাজেদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, ভেনিস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, রিয়াদুল জান্নাহ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় চলতি বছর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২২৮ হজ এজেন্সিকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ৪৬টির ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ এনেছে সৌদি সরকার, যা খতিয়ে দেখছে সৌদি।
ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এসব হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাতিল ও জরিমানাসহ নানা শাস্তি দেয়া হবে। অভিযুক্ত এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত শেষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ২৫ জানুয়ারির মধ্যে আগামী ২০১৮ সালের জন্য হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হবে।