আবদুল কাদেরের স্মৃতিচারণে ‘রং নাম্বার’ সিনেমার নায়িকা শ্রাবন্তী

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদের আর নেই। আজ শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে প্যানক্রিয়াসের (অগ্ন্যাশয়) ক্যান্সারে ভুগে মারা গেছেন দেশের নন্দিত অভিনেতা আবদুল কাদের। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজে। শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

দীর্ঘদিনের সহকর্মী আবদুল কাদেরের মৃত্যুর বেদনা ছুঁয়ে গেছে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীকেও। কাদেরকে তিনি মামা বলে ডাকতেন। সেই কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বছরজুড়েই প্রিয়জনদের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। কিছুদিন আগে আমার মা চলে গেলেন। আজ কাদের মামা। আমি উনাকে মামা বলে ডাকতাম। আমার অভিভাক ছিলেন।

১২ বছর ধরে অভিনয়ে নেই। অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ। কিন্তু কাদের মামা যোগাযোগ রাখতেন। অভিভাবকের মতো খোঁজ নিতেন। তার কাছে সবসময়ই আদর-স্নেহ পেয়েছি। মামা ও মামী দুজনেই আমাকে খুব আদর করেছেন সবসময়। তার মৃত্যুটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। অভিভাবক হারিয়ে ফেলার বেদনা দিচ্ছে।’

সহকর্মী হিসেবে আবদুল কাদেরকে নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শ্রাবন্তী বলেন, ‘মামা কোনো কাজ হাতে নিলে আমাকে কল দিয়ে জানতে চাইতেন আমি কাজটি করছি কি না। যদি এমন হতো দুজনই একটি নাটকে কাজ করছি তবে উনি খুব খুশি হতেন। মামা কখনো শুটিং ইউনিটের খাবার খেতেন না। বাসা থেকে নিয়ে আসতেন। যখনই আমি সেটে থাকতাম, ‘এই মেয়ে এদিকে আয়, ভাত খাবো।’ এই যে স্নেহটা, কোনোদিন ভুলবার নয়।’

আবদুল কাদের ক্যারিয়ারে বহু নাটক-অনুষ্ঠানে কাজ করলেও খোঁজ পাওয়া যায় তিনি একটি মাত্র সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘রং নাম্বার’ নামের সেই সিনেমায় নায়িকা ছিলেন শ্রাবন্তী। সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো জানতে চাইলে ‘জোছনার ফুল’খ্যাত অভনেত্রী বলেন, ‘এটা দারুণ ব্যাপার অবশ্যই। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতাই হয়েছে। আসলে এই মুহুর্তে সব এলোমেলো লাগছে।

মামার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সবসময়ই দারুণ ছিলো। তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার মানুষ। সবসময় নিজের চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতেন। সেটের লোকদের সঙ্গে ডিসকাস করতেন ঠিকমতো চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারছেন কি না। আরও কি কি করা যেতে পারে এইসব। প্রাণবন্ত ছিলেন। মনযোগী একজন অভিনেতা।’

ব্যক্তি আবদুল কাদের সম্পর্কে শ্রাবন্তী বলেন, ‘পর্দায় আমরা যে আবদুল কাদেরকে দেখতাম, সবসময় হাসাচ্ছেন,
দুষ্টুমির সংলাপ দিচ্ছেন; বাস্তব মানুষটা এরকম ছিলেনই না। নিপাট ভদ্রলোক। পরিপাটি, শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ। কদিন আগেও দেখছিলাম কাদের মামার মৃত্যুর ফেক নিউজ। আজও ভাবছিলাম যেন সব ফেক হয়। কিন্তু আজকের খবরটা খুবই নিষ্ঠুর। কারোরই করার কিছু নেই। দোয়া করি কাদের মামাকে যেন আল্লাহ বেহেস্ত দান করেন।’

এদিকে অভিনেতার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জেমি নিশ্চিত করেছেন, আজ শনিবার মাগরিব নামাজের পর রাজধানীর বনানীতে সমাহিত করা হবে তাকে। তার আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন আবদুল কাদেরকে।

‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের চরিত্র ‘বদি’ খ্যাত আবদুল কাদেরের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। তার বাবা মরহুম আবদুল জলিল। মা মরহুমা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদেরের সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। রেখে গেছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী ও বন্ধু স্বজন।