শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমের সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে আরও কমেছে সবজির দাম। বেশকয়েকটি সবজি এখন কেজি প্রতি ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সবজির পাশাপাশি কমেছে পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি ও নতুন আলুর দাম। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়েও এই সবজির কেজি ১২০ টাকায় কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
শিমের পাশাপাশি শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও কমেছে। বড় একটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আর গত সপ্তাহে ছোট যে ফুলকপি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন ১৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাজারে এখন বড় ফুলকপির সরবরাহ বেশি।
মাঝারি আকারের বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুলার দাম কমে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগে মুলার কেজি ৫০ টাকা ছিল।
শীতের আরেক সবজি শাল গমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আর কিছুদিন আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাউ এখন ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে।
শীতের সবজির পাশাপাশি বড় অঙ্কে দাম কমেছে বেগুনের। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের কেজি এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
বেশিরভাগ সবজির দাম কমলেও এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও বরবটি। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বেশকিছু দিন ধরে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে রাখা আলুর কেজি এখনো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সরকার দু’দফায় দাম বেঁধে দিয়েও আলুর দাম কমাতে পারেনি। অবশ্য বাজারে আসা নতুন আলুর দাম বড় অঙ্কে কমেছে। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া নতুন আলুর দাম কমে ৫০ টাকায় চলে এসেছে।
আলুর পাশাপাশি দাম কমেছে পেঁয়াজের। গত সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা ছিল। আর আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ৩০ থেকে ৪০ কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ আগের সপ্তাহের মতো এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
সবজি, নতুন আলু ও পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম কমেছে ডিম ও মুরগির। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর গত সপ্তাহে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বয়লার মুরগির দাম কমে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ী মোঃ আওলাদ বলেন, কিছুদিন আগে বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। এখন ৩০ টাকার মধ্যে অনেক সবজি পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে প্রতিনিয়ত শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। সুতরাং সামনে সবজির দাম আরো কমবে।
কারওয়ানবাজার থেকে বাজার করা খায়রুল হোসেন বলেন, সবজির দাম কমায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। কিছুদিন আগে এক’শ টাকা দিয়ে একবেলার সবজি কেনা যাচ্ছিল, এখন এক’শ টাকা দিয়ে অনেকগুলো সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে পেঁয়াজ ও আলুর দাম এখনো বেশি। আলু, পেঁয়াজের দাম আরও কমা উচিত।
আলুর দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মোঃ মিলন বলেন, পুরাতন আলুর কেজি আগের মতো ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া নতুন আলু ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এখন দিন যত যাবে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমবে। অল্প সময়ের মধ্যেই আলুও কম দামে কেনা যাবে বলে আমরা ধারনা করছি।
মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজার থেকে সবজি কেনা ময়দুল বলেন, কিছুদিন আগে বাজারে এসে একটা-দুইটা সবজি কিনে নিয়ে যেতাম। এখন দুই হাত বোঝায় করে সবজি কিনতে পারছি। শিম, গাজর, মুলা, ফুলকপি সবকিছুর দাম নাগালের মধ্যে। তাই পছন্দ মতো সবজি রান্না করে খেতে পারছি।
তিনি বলেন, সবজির পাশাপাশি ডিমের দামও কমেছে। এক ডজন ডিম ৮৫ টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বাজারে গিয়ে এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও এ অবস্থা ছিল না। তখন সবজির দাম শুনলেই বিরক্ত লাগতো। ৮০ টাকার নিচে কোনও সবজি পাওয়া যাচ্ছিল না।