দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অসহায় মায়ের যুদ্ধ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কৃষ্ণা ও তার মা বেলী রানী দাস।

ত্রিশোর্ধ্ব কৃষ্ণা রানী দাস। মা-বাবা, স্বামী-সন্তানকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তার সংসার। কিন্তু কপালে সুখ সইলো না। চোখে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার! ছিলেন পোশাক কর্মী, হয়ে গেলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী! বৃদ্ধা মা বেলী রানী এখন তার একমাত্র অবলম্বন।

পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নের কুবিরদিয়ার দাসপাড়া গ্রামে একটি ঝুপড়ি ঘরে মা-মেয়ের বাস। বাবা রতন চন্দ্র দাস আট বছর আগে মারা গেছেন। কৃষ্ণার চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়ায় স্বামী সুনীল দাসও তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। একমাত্র ছেলে ইশান মানুষ হচ্ছে খালা অঞ্জনা দাসের কাছে। কেবল অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন কৃষ্ণা দাস। সঙ্গে হারিয়েছেন স্বামী-সন্তান-সংসার।

অসহায় কৃষ্ণা ও তার মা বেলী রানী দাসের সঙ্গে কথা হয় সম্প্রতি। এ সময় কৃষ্ণা জানান, দশ বছর আগে গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তিনি। তখন প্রায়ই মাথা ব্যাথা ও জ্বর হতো তার। কিন্তু সে সময় এটা আমলে নেননি। কারণ বাবা-মা ও স্বামীকে টাকা পাঠাতে হতো।

তিনি বলেন, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আর চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম না। চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা আমাকে ঢাকায় যেতে বলেন। পরে অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে আমি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাই। তখন চাকরিও চলে যায়।

সুস্থ অবস্থার স্মৃতিচারণ করে কৃষ্ণা বলেন, এখনও মনে হয় আমি সেলাই মেশিনে বসে আছি। কাপড় সেলাই করছি। মেশিনের শব্দ কানে বাজে। কিন্তু চোখে না দেখায় চাকরি, স্বামী-সন্তান-সংসার হারালাম। এখন আমি সবার বোঝা।

কৃষ্ণার মা বেলী রানী দাস বলেন, আমাদের নিজেদের জায়গা-জমি বলে কিছু নেই। স্বামীর মৃত্যু ও মেয়ের দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর আমাদের অবস্থা দেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন তার জমিতে থাকতে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, যে মেয়ে রোজগার করে আমাদের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতো, সেই মেয়েই এখন ঘরে বসে শুধু কাঁদে। মেয়ের কষ্ট আর সহ্য হয় না। প্রতিবেশীরা সহযোগিতা না করলে মা-মেয়েকে না খেয়ে মরতে হতো। আগের চেয়ারম্যান কৃষ্ণাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে যা পাওয়া যায় সেটা দিয়ে চলে না।

বেলী রানী দাস বলেন, চিকিৎসা করালে কৃষ্ণা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে এবং আবারও কাজে ফিরতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই আমি কৃষ্ণার চোখের চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এমন কর্মঠ মেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারালো, বিশ্বাসই হয় না। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাকেই আজ অন্যের ভরসায় বেঁচে থাকতে হচ্ছে। অর্থাভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারটি। সত্যিই ওদের দেখে কষ্ট হয়।