রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলে প্রবেশ করে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ লোক। ছুটির দিনে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৫ লাখে। ক্রেতা-দর্শনার্থীর এ চিত্র দেখে সহজেই অনুমেয়, ঈদের কেনাকাটায় কতখানি জমে উঠেছে দেশের অন্যতম এই শপিং মল। ক্রেতারা খালি হাতে ঢুকে বের হচ্ছে দু’হাত ভরে।
চার বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় বের হয়েছেন আসমা জাহান। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শপিং করার সময় তার নেই। অগত্যা স্বামীকে ছাড়াই বের হতে হয়েছে তাকে। বিখ্যাত ব্র্যান্ড মোস্তফা মার্টে ঘুরে ঘুরে সন্তানের পোশাকসহ আনুষঙ্গিক পণ্য কিনছেন। আসমা জানান, শিশু সন্তানের পছন্দ স্পাইডারম্যানের ছবি আছে এমন পোশাক। এমনকি তার জুতা কিনতে গিয়েও স্পাইডারম্যান খুঁজতে হয়। মোস্তফা মার্ট থেকে ছেলের পছন্দের গেঞ্জি-প্যান্ট কিনেছেন। এখন জুতা কেনা বাকি। এর পর স্বামী ও নিজের পোশাক কিনবেন।
মোস্তফা মার্টের বিক্রয় প্রতিনিধি তাপসী বলেন, এখানে সারা বছরই ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। তবে ঈদের সময় চাপ একটু বেশিই। আগামী সপ্তাহে ক্রেতার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল সোমবার শপিং মল ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের মূল আগ্রহ মূলত পোশাক ঘিরেই। প্রতিটি দোকানে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা ডিজাইনের মনকাড়া সব পোশাক। ডিসপ্লে করা আছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোশাক। মলের বেজমেন্ট থেকে শুরু করে লেভেল-৭ পর্যন্ত সারি সারি দোকান সাজানো হয়েছে বাহারি পণ্যে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, গয়না, চশমা, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, বাচ্চাদের খেলনা, শো-পিস, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ এখানে মিলছে বহু রকম পণ্য। নামি-দামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে শপিং মলটিতে। লেভেল-১ এ অধিকাংশই তৈরি পোশাকের দোকান। এখানে রয়েছে শিশুদের পোশাক। অন্যান্য দোকানের সঙ্গে স্মার্টটেক্স, রিচম্যান, ফ্রি-ল্যান্ড এবং আলমাসের শোরুম রয়েছে এই লেভেলে। মোবাইল সামগ্রী, ঘড়িসহ অন্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য এবং যাবতীয় কসমেটিক্স ও ব্যাগও রয়েছে। লেভেল-২ এ রয়েছে বাহারি সব পাঞ্জাবির দোকান। লেভেল-৩ এ ইজি, দর্জিবাড়ি, জেন্টেল পার্ক, রিচম্যান লুবনান, প্লাস পয়েন্টসহ সব দোকানেই ক্রেতার ভিড়। লেভেল-৪ এ ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় শাড়ির দোকানে। লেভেল-৬ ও লেভেল-৭ এ জুতার দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ইনফিনিটি, দেশীদশ, এক্সট্যাসিসহ অন্যান্য শোরুমে বাহারি সব সংগ্রহ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পছন্দের সব পণ্য দেখছে। মানে ও দামে মিলে গেলেই তা মোড়কজাত। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পণ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা গুণাগুণসহ।
শপিং মলের নিচতলার জর্ডান ক্লাবের ম্যানেজার মো. আতিক বলেন, এ শপিং মলে সারা বছরই ক্রেতাসমাগম থাকে। তবে ঈদের সময় ক্রেতা-দর্শনার্থীর পথচারণায় মুখর হয়ে হয়ে ওঠে পুরো শপিং মল। বেচাকেনাও ভালো। আগামী সপ্তাহ থেকে কেনাবেচা আরও বাড়বে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
কেরানীগঞ্জ থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নাফিজা ইসলাম ও আহসানুর রহমান দম্পতি। ঈদের কেনাকাটার জন্য নাফিজার পছন্দের জায়গা বসুন্ধরা শপিং মল। তিনি বলেন, এখানে হাজারো রকমের অপশন। বহু অপশন থেকে বাছাই করে মনমতো জিনিসটা কেনা যায়। অন্যান্য বছরের মতো এবারের ঈদেও পরিবারের সবার জন্য এ মল থেকে শপিং করবেন। স্বামী-সন্তান সঙ্গে রয়েছে। শপিং হবে, সেই সঙ্গে ঘোরাঘুরিও।
বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৭ এ আছে দশটি দেশীয় ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে ‘দেশীদশ’। সেখানেও ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। অঞ্জন’স-এর ম্যানেজার রেজাউল করিম বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অন্য বছরের তুলনায় কম বলে জানান। তিনি বলেন, ঈদের মূল কেনাকাটা এখনও জমে ওঠেনি। হয়তোবা আরও ৪/৫ দিন লাগবে।
ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে বসুন্ধরা সিটিতে। বসুন্ধরা সিটি অফিসের (বিসিডিএল) কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম জানান, চলতি ঈদ মৌসুমে ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থী শপিং মলে প্রবেশ করছে। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার এই সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মলের নিরাপত্তারক্ষীরা সদা তৎপর।
এদিকে এবার ঈদের কেনাকাটায় নতুন অ্যাপ নিয়ে এসেছে ‘বিকাশ’। এই অ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে রেড ওরিজিন-এর নির্দিষ্ট আউটলেটে পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক।