ব্যাংকগুলোর ঘোষণার আলোকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ শুরু করেছে অধিকাংশ ব্যাংক। যে দু-একটি ব্যাংক এখনও সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করেনি তারাও দু-একদিনের মধ্যে নামিয়ে আনবে। আর ব্যাংকগুলোর ঘোষণার দাবির সুদহার কার্যকর হচ্ছে কি-না, তা তদারক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো এখন থেকে ৬ শতাংশ সুদে তহবিল জোগানে সম্মত হয়েছে। সোমবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধিকাংশ ব্যাংকের এমডি উপস্থিত ছিলেন। এমডিরা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, আহমেদ জামালসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকার্স সভা নামে পরিচিত এ বৈঠক থেকে গত ২০ জুন ব্যাংকগুলোর ঘোষণার আলোকে সুদহার কার্যকর ছাড়াও বড় ঋণ ভালোভাবে তদারক করা, ঋণ আমানত অনুপাত নির্ধারিত সীমায় রাখা, রেমিট্যান্স ও রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে এমডিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের সুদ কমানোর অন্তরায় দূর করতে সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, এখনই সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামবে না। প্রথম পর্যায়ে সব ব্যাংক শিল্প ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করবে। পর্যায়ক্রমে ভোক্তা ঋণ, এসএমই, ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সুদহার নামিয়ে আনা হবে। তবে কবে নাগাদ নামানো হবে, কোন পর্যায়ে নামানো হবে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেওয়া সব ব্যাংকের ঘোষণার পর বোঝা যাবে।
ক'টি ব্যাংক নতুন সুদহার বাস্তবায়ন করেছে- জানতে চাইলে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বেশিরভাগ ব্যাংক জানিয়েছে নতুন সুদহার কার্যকর হয়েছে। সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য ব্যাংকের বিষয়ে বলতে পারব না। তবে ঢাকা ব্যাংক সব ধরনের ঋণ নিয়ে কাজ করছে। বিদ্যমান ঋণ ও আমানতে সুদহার কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এই ব্যাংকার বলেন, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মেয়াদি আমানতে নির্দিষ্ট চুক্তি থাকে। ফলে এসব ব্যাংক আমানতে এখনই হাত দিতে পারবে না। তবে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, বিদ্যমান ঋণে নতুন সুদহার কার্যকরে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কেননা গত ৬ মাস ধরে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত নিয়েছে। ফলে বিদ্যমান ঋণে রাতারাতি সুদহার কমাতে গেলে জটিলতা দেখা দেবে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিল বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে রাখার ক্ষেত্রে উচ্চ সুদ দাবি করা হয়েছে। বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে রক্ষিত অগ্রণী ব্যাংকের একটি তহবিলে নতুন করে ৯ শতাংশ সুদ দাবি করা হয়। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক তাতে সম্মত না হওয়ায় ওই তহবিলটি তুলে নেয় অগ্রণী ব্যাংক। বিষয়টি গভর্নরকে অবহিত করলে ব্যাংকার্স সভা শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে আলাদা একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকরে ৬ শতাংশের বেশি সুদ না নেওয়ার বিষয়ে বলেন গভর্নর। এরপর সরকারি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে সম্মত হয়। যদিও বৈঠকের শুরুতে ৬ শতাংশ সুদে তহবিল জোগান না দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে সরকারি ব্যাংকগুলো।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল-মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো এখন থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৬ শতাংশ সুদে তহবিল দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্ত ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ব্যাংক সুদহার কার্যকর করেছে। যেসব ব্যাংক এখনও কার্যকর করেনি দু'একদিনের মধ্যে তারাও পর্ষদ বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংককে ৬ শতাংশ সুদে তহবিল দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছে।
সুদহার কার্যকরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা চেয়ে ব্যাংকগুলোর দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে কোনো ব্যাংক যে কোনো সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এটা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সুদহার কমানোর ঘোষণা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ঘোষণা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কীভাবে করবে সেটা ব্যাংকের বিষয়। তবে এমন কিছু করা যাবে না যাতে মারামারি শুরু হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে কোনো ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়ার কারণে যদি ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নির্ধারিত সীমার ওপরে চলে যায় সেটা শিথিলভাবে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। নতুন সুদহার কার্যকর করতে গিয়ে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে যদি কোনো সমস্যা হয় কিংবা আন্তঃব্যাংক আমানত নেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে সেটা শিথিলভাবে দেখবে। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তা দেবে।
সুদহার কার্যকরে ব্যাংকগুলো নীতি সহায়তা চেয়েছে। তবে সরকারি আমানত তো এক রাতে বেসরকারি ব্যাংকে আসবে না। এজন্য সরকারের নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করেছে বলে তারা শুনেছেন। তবে ইকো সিস্টেমে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। শুধু সরকারি ব্যাংক বা সরকারি আমানত নয়, বেসরকারি পর্যায়ের বড় আমানতকারীদেরও বিষয়টি ভাবতে হবে। সবাই মিলে দেশ। যদি দেশ না থাকে তাহলে তারা টাকা পাবেন কোথায়। তিনি বলেন, সুদহার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন এটাকে এক ধরনের সংকট মনে হচ্ছে। তবে এ থেকে বড় ধরনের সুযোগও তৈরি হতে পারে। ব্যাংকগুলো সবাই মিলে যদি ভালোভাবে এটা বাস্তবায়ন করতে পারে, সবাই মিলে যদি আমানতে সুদহার নামিয়ে আনা যায় সেটা সবার জন্য ভালো হবে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com