৮ জনের মৃত্যুর পর ব্রিজের বাঁশের সঙ্গে টিন বেঁধে দিলো কর্তৃপক্ষ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবার টিনের বেড়া দিয়ে বাঁশের রেলিংকে শক্তিশালী করল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নে শনিবার ব্রিজের বাঁশের রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে আটজন নিহত হওয়ার পর রোববার রেলিংকে পোক্ত করতে মধ্যযুগীয় এ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সড়ক ও জনপথের এ অভাবনীয় উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে অভিজ্ঞ মহল। শনিবার ধুলদী ব্রিজে বাঁশের রেলিং ভেঙে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে হতাহতের ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে ব্রিজের নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটির নিরাপত্তার বেষ্টনী অর্থাৎ রেলিং শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল। রেলিং কংক্রিটের অথবা লোহার পাইপ দিয়ে করা হলে দুর্ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সাধারণত এ ধরনের ব্রিজে নিরাপত্তা বেষ্টনী উল্লেখিত মানদণ্ড অনুযায়ী হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ধুলদী ব্রিজের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকার রেলিংটি ছিল বাঁশের তৈরি। যেটা রীতিমত বিস্ময়কর। বিশেষ করে ধুলদী ব্রিজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজে এটা অকল্পনীয়। ব্রিজে বাঁশের রেলিংয়ের ফলেই ঝরে গেল ৮ প্রাণ এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

শনিবার দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আশা করেছে কর্তৃপক্ষ রেলিং দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করবে। যেখানে মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে প্রশ্ন সেখানে কালক্ষেপণের কোনো অজুহাত ধোপে টেকে না। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কোনো গুরুত্বই দিলো না। দায়সারাভাবে বাঁশের রেলিংয়ের সঙ্গে টিনের বেড়া দিয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করলো তারা।

সচেতন মহলের প্রশ্ন, আটজনের প্রাণহানি ও আহতের ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষের কি কোনো বোধোদয় হবে না। মানুষের জীবনের মূল্য কী কখনো তাদের কাছে গুরুত্ব পাবে না।

রোববার দুপুরে দুর্ঘটনাকবলিত ধুলদী ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা ব্রিজের ভেঙে যাওয়া অংশে পুনরায় বাঁশ দিয়েই রেলিং দিচ্ছে। বাঁশের রেলিংয়ের সঙ্গে টিনের বেড়া দেয়া হচ্ছে। ব্রিজের দু’পাশে র‌্যাম্বল স্ট্রিপ দেয়ার কাজ চলছে। ব্রিজের দু’পাশে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ব্রিজে সাময়িকভাবে বাঁশের রেলিং ও টিনের বেড়া দেয়া হয়েছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিজের দু’পাশে র‌্যাম্বল স্ট্রিপ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্রিজের দু’পাশে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্রিজে লোহার রেলিং দেয়ার জন্য মালামাল কেনা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে লোহার রেলিং লাগানোর কাজ শুরু করা হবে।

এদিকে, ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী ব্রিজে শনিবার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসলাম মোল্লা এবং অপরটিতে রয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম। আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসলাম মোল্লাকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধি এবং বিআরটিএ’র প্রতিনিধি।

ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কে এম আব্দুল্লাহ ও আল্লাহদীপুর থানার ওসি মাসুদ পারভেজ।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি এ এফ এম নাছিম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার পর শনিবার রাতেই ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপসহকারী পরিদর্শক সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

শনিবারের মর্মান্তিক সড়ক দর্ঘটনায় নিহত আটজনের পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন কমফোর্ট লাইন বাসের সুপারভাইজার, গোপালগঞ্জ সদরের হানিফ শেখ, বাসযাত্রী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কাঠি গ্রামের ফারুক মোল্লা, আসমা বেগম, নড়াইলের বনগ্রাম কালিয়া গ্রামের মো. আলী খন্দকার, একই গ্রামের কেয়া আক্তার, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শিবপুর গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, গোপালগঞ্জ সদরের ডলি আক্তার এবং মোটরসাইকেল চালক ফরিদপুর সদর উপজেলার বিলমাহমুদপুর গ্রামের ওয়াহিদুজ্জামান। আঙুলের ছাপ নিয়ে মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

এদিকে, দুর্ঘটনায় আহত ২০ জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

এর আগে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় ব্রিজের রেলিং ভেঙে কমফোর্ট লাইনের একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে আটজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় আহত হয় আরও ২০ জন। দুর্ঘটনার পর ব্রিজটির নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে বাঁশের রেলিং নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আক্ষেপ করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের রেলিং থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনায় আনেনি। ধুলদী ব্রিজটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। ব্রিজের উত্তর পাশটি বাঁকা থাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি মোড় ঘুরলেই হঠাৎ ব্রিজ সামনে এসে পড়ে। ফলে অনেক সময় চালকদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়। যদি গাড়ির বেপরোয়া গতি থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এমন বাস্তবতার পরও ব্রিজের রেলিং যদি মানসম্মত না হয় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটা নিশ্চিত। এসব কারণেই শনিবার ব্রিজের রেলিং ভেঙে খাদে বাস পড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।