বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পের খসড়া নিয়ে ৯ আগস্ট আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। প্রকল্প দলিলে বলা হচ্ছে, উগ্রপন্থা, মাদক ব্যবসা, মাদকাসক্তি, মানব পাচার এবং শিশু ও নারী নির্যাতনের মতো কাজ থেকে দূরে রাখতে কর্মক্ষম রোহিঙ্গাদের অর্থপূর্ণ উৎপাদনশীল কাজে লাগানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
প্রকল্পের আওতায় ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাজ করবে রোহিঙ্গারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক ও নর্দমা নির্মাণ, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ১১ কিলোমিটার সড়কসহ উখিয়া উপজেলার ৩১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, টিলার ওপরের শিবিরে যাওয়া-আসার সিঁড়ি তৈরি, আধা-স্থায়ী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র, ৩৩টি শিবিরে পানির নল বসানো, ঘণ্টায় ৩৫০ ঘনমিটার পানি শোধনাগার স্থাপন, নর্দমা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বন সম্প্রসারণ।
এ ছাড়া শিবিরগুলোর মধ্যকার রাস্তা পরিষ্কার, পয়োপরিষ্কার, বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের কাজে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা এই প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মৌলিক সেবা (নিরাপদ পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ-সংযোগ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, দূষণমুক্ত রান্নার ব্যবস্থা) নিশ্চিত হবে এবং রোহিঙ্গাদের সামাজিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাবে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ আসতে থাকে। তার আগে আসা আরও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ছিল। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এখন স্থানীয় বাঙালিদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে স্থানীয় বাজারে শ্রমের মজুরি কমে গেছে। প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা শিবির গড়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা বন কেটে জ্বালানির চাহিদা মেটাচ্ছে।
প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে।
প্রকল্পের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তার অংশটি বাস্তবায়ন করবেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী সেলে এই প্রকল্পের জন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট তৈরি হবে।