৭ মার্চের ভাষণ প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ রিহার্সেল দিয়ে তৈরি করা হয়নি। এই ভাষণ দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। এই ভাষণের আবেদন যুগ যুগ ধরে থাকবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক এই ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট তহবিল। খবর বাসস, ইউএনবি ও বাংলা ট্রিবিউনের।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পৃথিবীর যে কোনো ভাষণের চেয়েও এই ভাষণ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। এটি অতুলনীয় ভাষণ। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল এ ভাষণ। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এ ভাষণ আজ স্বীকৃত। মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনা ছিল এ ভাষণে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ভাষণটি প্রতিদিন বাজানো হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর হারিয়ে গিয়েছিল এ ভাষণ। আমরা আমাদের সেই হারানো মানিক ফিরে পেয়েছি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব এ ভাষণ নিয়ে গর্বিত। কেবল আমাদের জন্যই নয়- বিশ্বের সব স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের জন্য এই ভাষণ প্রেরণার উৎস। বিশ্বের সব দেশ এই ঐতিহাসিক ভাষণ অনুসরণ করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি ছাড়া বিশ্বের আর কোনো জাতি বঙ্গবন্ধুর মতো দীর্ঘ ২৩ বছরের সফল অসহযোগ আন্দোলন করতে পারেনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রতিপক্ষ ছিল আলবদর, রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে উন্নয়নের গতি থামিয়ে দিয়েছিল ও ইতিহাস বিকৃতি করেছিল। এখন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এবং এখন এটি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ একটি অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে পরিণত করে। এই ভাষণ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সব মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাবে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেও এটি উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাবো, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’

এ সময় ছয় দফাকে মুক্তির সনদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফার বিপরীতে একটি আট দফা দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে, ছয় দফা থেকে আওয়ামী লীগ বিচ্যুত হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। এ হত্যাই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরিকল্পনার একটা অংশ। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ফলে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এরপর তিনি লন্ডনে যান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে তবে পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই তিনি সেখানে বসেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে মার্শাল ল’ দেওয়ার সময়েই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ছাত্রলীগকে দিয়ে ১৯৬২ সালের পর থেকেই একটা ‘নিউক্লিয়াস’ তিনি গঠন করেছিলেন। প্রতিটি জেলায়-মহকুমায় তিন সদস্যের কমিটি ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার প্রস্তুতি অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তাদের নিয়েই মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। আলোচনা করেন এশিয়ান এজ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের সিইও মাশুরা হোসেন।