৭ টাকার ফুলকপি কেন ৫০ টাকা হবে- এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনের হোটেল ফারসের হলরুমে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যেও ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ প্রশ্ন তুলেন।
নানক বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে থাকব জানতে পেরে আমি (সোমবার) রাত ১১টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা করি। রাত সোয়া ১২টার দিকে নিমসার বাজারে গিয়ে পৌঁছাই এবং রাত আড়াইটা পর্যন্ত আমি নিমসার বাজারে বাজারদরটি বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি কথা বলেছি তৃণমূলের কৃষকের সঙ্গে। যারা মাথায় করে মাল নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। পাইকারি বাজারে কত করে বিক্রি করছেন- তা জানতে চেয়েছি। তারা কত টাকা পাচ্ছেন সবজির দাম? এই বিষয়গুলো আমি লুঙ্গি পরে সাধারণ মানুষের মতো বোঝার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, কেন নিমসার বাজারে যে ফুল কপি কিনছে ৭ টাকায়, সেই ফুল কপি কারওয়ান বাজারে তিন হাত বদলে ২০ টাকা বিক্রি হবে। সেই ২০ টাকার কারওয়ান বাজারের কপি এখান থেকে যেতে না যেতেই কৃষি মার্কেটে গিয়ে ৪০ টাকা ৫০ টাকা হয়ে যাবে কেন? এটি মেনে নেয়া যায় না। এটি কোনো জনবান্ধব সরকার মেনে নিতে পারে না। এটি জনগণের দল আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না।
এ সময় নানক বলেন, সারা বিশ্বে রমজান মাসে বাজার দর নেমে যায় আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ী রমজান মাসে হাকিয়ে উপরে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এটি লজ্জার।
দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি অসুস্থ অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সেই অসুস্থ অবস্থায় দায়িত্বশীল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিশ্চুপ থাকতে পারে না, আমরা কখনও থাকিনি। ২০০৮ সালের সরকার গঠনের পর এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, আমরা চেষ্টা করেছিলাম একটি বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বসে আমরা চেষ্টা করেছিলাম বোঝার জন্য কোথায় শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাজার পরিস্থিতিকে লাগামহীন হতে দেয়া যাবে না। একটি জনগণের সরকার এমনিভাবে বাজারের যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি রয়েছে, সেটি মেনে নিতে পারে না। কারণ এই সরকার শেখ হাসিনার সরকার, ব্যবসাবান্ধব সরকার।
এ সময় আওয়ামী লীগের এই নেতা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার, চালের দাম বাড়েনি? কেন বাড়ল? কেন বাড়ছে আদার দাম? কেন বাড়ছে রসুনের দাম? বাঁধাকপি, ফুলকপি এগুলো আমি বলতে চাই না। কেন ফুলকপির দাম বাড়বে? মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখন ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে। আজকে সব ব্যবসায়ীরা মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেন, দর সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসুন।
তিনি বলেন, আজকে ভারত থেকে গরু আসতে দেয় হয় না। গরু এখন আমাদের দেশে উদ্বৃত। এটা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তিনি একটি বাড়ি একটি খামার করে মানুষকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করেছেন। পশু পালনে উৎসাহিত করেছেন। এখন গরু খামারির অভাব নেই।
দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকার উৎখাতে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আন্দোলনের আহ্বান প্রতিক্রিয়ায় নানক বলেন, আমরা এর কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাই না। আমরা তাই বলছি, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অস্বস্তিতে রাখলে দেশ অস্বস্তিতে থাকবে। কাজেই আজকে থেকে চিন্তা করতে হবে আগামীকাল থেকে যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। দ্রব্যমূল্যকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটি এই সভার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আবদুস সাত্তার।