মোঘল শাসনামলে জমিদার দেওয়ান শাহবাজ আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বাড়িউরা এলাকায় একটি পুল নির্মাণ করেছিলেন। খালের ওপর নির্মিত ওই পুলের গোড়ায় হাতি নিয়ে বিশ্রাম করায় কালক্রমে পুলটির নাম হয়ে ওঠে হাতিরপুল। হাতিরপুলের পাশেই তিনশ বছরের দুটি কবরস্থান ও একটি মসজিদ রয়েছে।
সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউরা বাজার সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই এই পুরকীর্তির অবস্থান। মহাসড়কটি ছয়লেনে উন্নীত করার জন্য ভাঙা পড়তে যাচ্ছে এই হাতিরপুল। পুলটিকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি বছরেই এই কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন সম্প্রতি সড়কের উত্তর পাশের জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হাতিরপুলটিকে রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে বাড়িউড়া গ্রামের বাসিন্দা জসীম উদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, বাড়িউড়া বাজারের পূর্ব পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা উত্তর পাশে ঐতিহাসিক হাতিরপুলটির অবস্থান। ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সরাইলের দেওয়ান শাহবাজ আলী সরাইল থেকে শাহবাজপুর হয়ে হরষপুর যাতায়াতে হাতির বিশ্রামের জন্য একটি ছাউনি নির্মাণ করেন, যা পরে ‘হাতিরপুল’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহার করে তৈরি করা এই পুলটি সরাইলের এক ঐতিহ্য যা এখন প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ।
অন্যদিকে সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ থেকে বারিউড়া হয়ে শাহবাজপুর গ্রাম পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উত্তর পাশে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত তিনশ বছরের পুরনো দুটি কবরস্থান। বাড়িউড়া, ইসলামাবাদ ও বছিউড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে মরদেহ সমাহিত করেন। এই দুটি কবরস্থান ছাড়া সাধারণ মানুষের বিকল্প আর কোনো বড় কবরস্থান নেই। এছাড়া প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মিত বারিউড়া বাজার জামে মসজিদটিও মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত। এই মসজিদে বাজারের ক্রেতা, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ নামাজ আদায় করেন। মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা ও কবরস্থানের জায়গা চলে যাওয়ার খবরে তারা এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন বলেন, এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবগত রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করেই মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজের প্রকল্প চূড়ান্ত হবে।