৬০ ব্রিটিশ এমপির মুখে ‘জয় বাংলা’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের (এফসিও) সাউথ এশিয়া বিষয়ক মিনিষ্টার মার্ক ফিল্ড বলেছেন, বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র। বাঙালির মানবিকতা আজ বিশ্বব্যাপি সমাদৃত।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের টেরেস প্যাভিলিয়নে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মার্ক ফিল্ড যখন বাংলাদেশের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন তার পাশেই ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক।

রোহিঙ্গাদের মানবিক দুর্যোগে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রশংসা করে মিনিষ্টার মার্ক ফিল্ড বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব বিশ্ব সভায় দেশটিকে একটি শ্রদ্ধার আসন এনে দিয়েছে।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের মতো একটি জনবহুল এলাকার মানুষ নিজেদের কষ্ট অগ্রাহ্য করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র, এই ভূখণ্ডের মানুষ মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ।

জন্মের পর গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, এমন মন্তব্য করে মার্ক ফিল্ড বলেন, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে যে রাষ্ট্রের জন্ম তা আজ বিশ্ব সভায় সমাদৃত।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে- এমন প্রত্যাশা করে ব্রিটিশ এফসিও মিনিষ্টার বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশটির চলমান গণতন্ত্র আরও সমৃদ্ধ হবে এমনটিই আশা করে ব্রিটেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ব্রিটেন-বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক।

তিনি বলেন, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ জনগণ ও পার্লামেন্টের এমপিদের দৃঢ় সমর্থন আমাদের ইতিহাসের অংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ কঠিন সময় পাড় করছে- এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহতম এই মানবিক বিপর্যয় বাংলাদেশের একক কোন সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। নিজেদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বব্যাপী মানবিকতার উন্মেষ ঘটার সম্ভাবনার দার খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’র সম্মান।

রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই, মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের অব্যাহত চাপ খুবই জরুরি। তিনি এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার ও এমপিদের কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।

ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মিনিষ্টার ছাড়াও শ্যাডো মিনিষ্টার এবং প্রায় ৬০ জন ব্রিটিশ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অধিকাংশ এমপিই বক্তব্যের শুরুতে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান ও বক্তৃতা শেষ করেন জয়বাংলা বলে। এমপিরা তাদের বক্তৃতায়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা করে দেশটির বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তারা ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিরও প্রশংসা করেন। তারা বলেন, মাল্টিকালচারেল ব্রিটিশ সোসাইটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান খুবই সমৃদ্ধ। রাজনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবাসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সেক্টরের উচ্চ পর্যায়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের অবস্থান চোখে পড়ার মত।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- শ্যাডো সেক্রেটারি অফ স্টেট ডেভি আব্রাহাম, পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি মাইক্যাল এলিজ এমপি, শ্যাডো মিনিষ্টার চি অনুরাহ এমপি, শ্যাডো লিডার অব দ্যা হাউজ অফ কমন্স ভ্যালেরী ভাজ এমপি, শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেট জনথন আশওয়ার্থ এমপি, শ্যাডো এসএনপি স্পোকপার্সন জোয়ান্না চেরী এমপি, শ্যাডো মিনিষ্টার জুলিয়ে কুপার এমপি, শ্যাডো মিনিষ্টার ফ্যাবিয়ান হ্যামিল্টন এমপি, শ্যাডো চ্যান্সেলার অব এক্সচেকার জন ম্যাকডনাল এমপি ও অনুষ্ঠানের হোষ্ট জিম ফিজ পেট্রিক এমপিসহ অন্যান্যরা।

এমপিদের বক্তৃতার ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রদর্শিত হয় প্রজেক্টর স্ক্রিনে, পরিবেশিত হয় দেশাত্ববোধক গান ও নৃত্য। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের এ অনুষ্ঠান।