বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য আরও ৬০ জন আনসার সদস্য নেওয়ার কথা জানিয়েছে কতৃপক্ষ। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত এল।
রোববার (১২ জুন) দুপুরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হাসপাতালে নিরাপত্তার স্বার্থে আগে ৪০ জন আনসার সদস্য নেওয়া হয়েছিলো। তবে এত বড় হাসপাতালে এই অল্প সংখ্যক আনসার সদস্য দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া কষ্টকর।
তাই আরও ৬০ জন আনসার সদস্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই তাদের হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হবে।
শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহম্মেদ খান বলেন, শনিবার (১১ জুন) দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক কলেজ ছাত্রের স্বজনরা আমাদের উপর হামলা করেছে। তারা আমাদের হুমকিও দিয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কিত। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
রাকিন আরও বলেন, এক একজন রোগীর সঙ্গে স্বজন থাকে ২০ থেকে ২৫ জন করে। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হয়। কিছু হলেই হুলস্থূল কাণ্ড শুরু করে দেয়।
আমরা চাই রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজন স্বজন থাকুক। পাশাপাশি হাসপাতালে আনসার সদস্যয় বৃদ্ধি করলে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ও ইন্টার্নদের সঙ্গে কথা বলেছি। সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া ১৬ জুন হাসপাতালে মিটিং রয়েছে, সেখানে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ থাকবেন। ওই মিটিং এ সব সমস্যাা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদের স্বজনদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় রিয়াদের সহপাঠি শাওন এবং মামা আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ইন্টার্ন চিকৎকদের উপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন।
তবে গ্রেফতার হওয়া শাওনের মা শাহনাজ পারভীন বলেন, ইন্টার্নরা মৃত রিয়াদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের হকিস্টিক সহ লাঠি দিয়ে মারধর করেছে।
আবার উল্টো তারাই মামলা দিয়েছে। আমরা ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবো না। আমার নির্দোষ সন্তানের মুক্তি চাই।
প্রসঙ্গত, দুই বন্ধু হৃদয় ও ওসমান গনিকে নিয়ে শনিবার দুপুরে মোটরসাইকেলে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তালতলী যাচ্ছিল রিয়াদ।
১টার দিকে মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। গুরুতর আহত তিন বন্ধুকে ভর্তি করা হয় বরিশাল মেডিক্যালে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রিয়াদের। রোগীর স্বজনদের দাবি, আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ জানানোর পরও চিকিৎসকরা শোনেননি। চিকিৎসার অভাবে রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে ওই রোগীকে বাঁচানোর জন্য। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা হয়। রাত সোয়া ৮টায় এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের সব গেট আটকে বিক্ষোভ করে ইন্টার্নরা।
বিনা চিকিৎসায় কলেজছাত্র রিয়াদের মৃত্যু অভিযোগ তুলে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে শনিবার রাত সোয়া ১০টা থেকে বিক্ষোভ করে রিয়াদের স্বজন ও সহপাঠিরা।
পরে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।