গ্রীনলাইন বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে পরিবহনটির কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
এ সময় আদালত চেকটি যাচাই-বাচাই করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাকি ৪৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) বা অন্য কোনো হাসপাতালে রাসেলের কৃত্রিম পা স্থাপনসহ সব চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা গ্রীনলাইন পরিবহন মালিককে পরিশোধ করতে বলেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ৩টার (বিকেল) মধ্যে রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকার কিছু অংশ না দিলে আমাদের (আদালত) মতো আমরা ব্যবস্থা নেব।
হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গ্রীনলাইনের মালিক মো. আলাউদ্দিন ও তার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এ আদেশ দেন।
এই আদেশের পরই বিকেল ৩টায় ৫ লাখ টাকার চেক নিয়ে আদালতে হাজির হন গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ। শুনানির শুরুতেই তিনি আদালতকে জানান, আপাতত ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হলো। এ সময় আদালত রাসেল সরকারকে ডেকে নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তার হাতে চেক তুলে দেন।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিকেল ৩টার মধ্যে তাকে ৫ লাখ টাকার চেক বুঝিয়ে দেয় গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অন্যদিকে গ্রীনলাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।
এরপর আদালত গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, বাকি ৪৫ লাখ টাকা কবে দেবেন? জবাবে অজিউল্লাহ বলেন, এক মাস সময় চেয়েছি। এরপর আদালত এক মাসের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ সময়ের মধ্যে বাকি টাকা দিতে নির্দেশ দেন। এর বাইরে রাসেলের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
রাসেল সরকারের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা জানিয়েছেন, গাড়ির কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের এতো বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে সমস্যার কথা মৌখিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আদালতের আদেশ বহাল রয়েছে।
আদালতে গ্রীনলাইনের মালিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আদালতের প্রতি আবেদন করেন। গ্রীনলাইনের আইনজীবী মোহাম্মদ ওয়াজিউল্লাহ বলেন, তার অনেকগুলো আবেদন ছিল। তিনি বলেছেন গত তিন বছর তার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তিন মাস আগে সাড়ে তিন কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন। প্রতিটা গাড়ির সঙ্গে ব্যাংক লোন আছে। তাই তিনি বলেছেন যদি বিবেচনা না করেন তাহলে পরিশোধ করতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন।
সকালে শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘আমাদের সাথে এখনও গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি।’ এ সময় গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের জন্য আবারও সময় চান।
তখন আদালত গ্রীনলাইনের মালিক ও আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার পা হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, আপনারা কোনো খোঁজ নিলেন না। একটা টাকাও দিলেন না। রাসেলের একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে। আরেকটি পা-ও যাওয়ার পথে। আপনাদের ব্যবসা তো ঠিকই চলছে। মানবতারও তো একটা ব্যাপার আছে। এ সময় গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ আদালতকে বলেন, রাসেল সরকারের চাকরির ব্যবস্থা করবেন গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
আদালত বলেন, আপনারা আগে বিকেল ৩টার মধ্যে আদালত যে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছেন সেটার কিছু অংশ পরিশোধ করেন। তাহলে আমরা বুঝবো আপনারা আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। অন্যথায় আমাদের মতো করে আমরা ব্যবস্থা নেব। এরপর আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য বিকেল ৩টায় সময় নির্ধারণ করেন।
গত ৪ এপ্রিল পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৩১ মার্চ গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধার একই এলাকার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রিট আবেদন করেন।
এই রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ১৪ মে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ এক রায়ে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
এরপর হাইকোর্ট রুলের শুনানি নিয়ে রাসেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
পরে এ নিয়ে আরো কয়েক দফা আদেশ হয়েছে। এসব আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাসেল সরকারের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় ১১ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আজ নতুন করে আদেশ দিলেন আদালত।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com