৪৪ বছর পর নতুন আইন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে

:
: ৬ years ago

  • বিলুপ্ত ট্রেজারার পদ
  • নির্বাহী কমিটির কাঠামো পরিবর্তন
  • কমিটিতে সদস্য ৫ টি করে ফেডারেশনের সভাপতি
  • একজন খ্যাতনামা নারী ক্রীড়াবিদ কমিটিতে বাধ্যতামূলক

১৯৭৪ সালে প্রণীত ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট রহিত করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তা পুন: প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তিন বছর আগে ‘প্রস্তাবিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৫’ নামে। তিন তিনবার শিরোনাম বদলিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন অ্যাক্ট ।

মন্ত্রী পরিষদ ইতোমধ্যেই ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সংসদ থেকে পাশ হয়ে আসলেই ৪৪ বছর পর নতুন আইন পাবে দেশের খেলাধুলার অন্যতম এ অভিভাবক সংস্থাটি। ১৯৭৪ সালে এনএসসি অ্যাক্ট প্রণয়নের পর সংশোধন হয়েছে ৫ বার (১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৯১, ২০০৩ ও ২০১১)। নতুন অ্যাক্ট চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বিলুপ্ত হবে প্রায় সাড়ে তিন যুগের পুরোনো আইনটি।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮ কে যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু ধারা সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। নতুন আইনে রাখা হয়নি ট্রেজারার পদ। এক সময় পরিষদের অর্থ বিষয়ক কার্যক্রমের প্রধান দায়িত্ব ছিল ট্রেজারের। কিন্তু ১৯৯৮ সাল থেকে সরকার পরিচালক অর্থ হিসেবে একজন কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ দেয়ায় মূলত: ট্রেজারে কোনো কাজ নেই। পরিষদের অর্থ বিষয়ক সব কাজই করে থাকেন পরিচালক (অর্থ)। যে কারণে ট্রেজারার পর বিলুপ্ত করেই প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন আইন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বর্তমান ট্রেজারার বাদল রায় পদটি বিলুপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা রেখে লাভ কী? কোনো কাজই তো নেই ট্রেজারের। বছরের একবার বাজেট উপস্থাপন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ট্রেজারের কাজ।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী কমিটির কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনও আনা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভূক্ত ৪৮ ফেডারেশনের মধ্যে মাত্র ২০ টি সুযোগ পাবে নির্বাহী কমিটিতে থাকার। তাও পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর ৫টি করে।

আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রথম এক বছর নির্বাহী কমিটিতে থাকবে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতার ও অ্যাথলেটিক। পরের বছর তাদের পরিবর্তে নির্বাহী কমিটিতে ঢুকবে শ্যুটিং, কাবাডি, ভলিবল, দাবা ও ভারোত্তোলন। এভাবে নির্ধারিত ২০ ফেডারেশন/সংস্থা পর্যায়ক্রমে ১ বছর করে নির্বাহী কমিটিতে থাকবে।

নতুন আইনে নির্বাহী কমিটিতে সদস্য থাকবেন ফেডারেশনগুলোর সভাপতি। পুরোনো আইনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা ফেডারেশন যাকে মনোনয়ন দিতো তিনিই নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে পারতেন। এখন সভাপতি কোনো কারণে সভায় উপস্থিত না হতে পারলে তার পরিবর্তে অন্য কেউ থাকতে পারবেন না।

১৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে থাকবেন- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের (অর্থ মন্ত্রণালয়) সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) সচিব, কারিগরী ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মহাপরিচালক, ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ৫ টি ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি এবং একজন নারীসহ ৩ জন খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদ।

আগে নির্বাহী কমিটিতে দুই জন খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদ ছিলেন। তবে নারী ক্রীড়াবিদ বাধ্যতামূলক ছিল না। নতুন আইনে এই কোটা বাড়িয়ে কমপক্ষে একজন নারী ক্রীড়াবিদ কমিটিতে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে প্রথমবারের মতো রাখা হয়েছে নির্বাহী কমিটিতে।

মন্ত্রী পরিষদ প্রস্তুাবিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮ অনুমোদনের সময় প্রশ্ন উঠেছিল বিওএ কেন এ সংস্থাটির তফসিলভূক্ত নয় তা নিয়ে। মূলত: বিওএ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভূক্ত সংস্থা না হওয়ায় তারা তফসিলে এ সংস্থাকে রাখেনি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রী পরিষদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮ অনুমোদন করলেও বিওকে তফসিলভূক্ত করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। এ বিষয়ে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তা জানতে চাইবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছে।

‘ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট-১৯৭৪’এ একটি বিতর্কিত ধারা ছিল ২০(ক)। যে ধারাবলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে কোনো সময়ে তাদের অধিভূক্ত ফেডারেশন/সংস্থার নির্বাহী কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে পারে। নতুন আইনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ ক্ষমতা পুরোপুরি বহাল রাখা হয়েছে।