ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় এখনও শরীরে ৪০টি গ্রেনেডের স্প্র্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী, রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ। গ্রেনেডের ক্ষত ও সেদিনের দুঃসহ কষ্টের দিনগুলো তিনি এখনো এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারেন না।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনি অন্যতম রাজ স্বাক্ষী। দেশকে যোগ্য নেতৃত্ব হারা করতেই এই হামলা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। জানা যায়, গ্রেনেড হামলার মুহুর্তে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অস্থায়ীভাবে ট্রাকের উপর তৈরিকৃত মঞ্চের পাশেই ছিলেন। ঘাতকদের গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনিসহ শেখ হাসিনার পাশে থাকা সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতারা মানব দেয়াল রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষার চেষ্ঠা করেন।
এসময় তার শরীরে অসংখ্যা গ্রেনেডের স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তৎকালীন দুই নারী নেত্রীর সহযোগীতায় তিনি প্রথমে ঢাকার সিকদার মেডিকেলে ভর্তী হন। সেখানে ৮ দিন থাকার পর ২৯শে আগস্ট তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বেলজিয়ামে যান। সেখানে কয়েকটি ¯িপ্রন্টার বের করতে পারলেও এখনও ৪০টি ¯িপ্রন্টার তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রাজ স্বাক্ষী হিসেবে তিনি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনকে সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল।
ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, সেদিন ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন বিষ্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্রিন্টার তার শরীরে ঢুকে যায়। চিকিৎসায় কিছু স্প্রিন্টার বের করা হয়। বাকি অসংখ্য স্প্রিন্টার এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে। যেগুলো বের করতে গেলে তার নার্ভ কেটে বের করতে হবে। ফলে তার মৃত্যুও হতে পারে। তাই তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি স্প্রিন্টার বের করেননি। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক একাউন্টে ২১ আগস্টের সময় আহত হওয়ার দুর্লভ ১ ছবি জুড়ে দিয়ে ইংরেজিতে স্ট্যাটাস দেন ড. হাছান মাহমুদ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দৃশ্য এটি, আমি গুরুতর আহত। আমাদের দলের দুই নারী নেত্রীর সহায়তায় কোনোভাবে একটি বাসে উঠেছিলাম। সেদিন আমার জীবন রক্ষা করার জন্য তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। যখন আমি হাসপাতালের পথে তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি আর এক ঘণ্টা দেরি হতো তাহলে সেদিন অন্যকিছু হয়ে যেতে পারতো। এখনো আমার শরীরের নিচের অংশে ৪০টি স্প্রিন্টার আছে। আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
ফেসবুকে দেয়া ছবিতে দেখা যায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ড. হাছান মাহমুদ রক্তে রঞ্জিত। তাঁর সারা শরীরে রক্ত ঝরছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে পরনের শার্ট। কাঁদছেন হাছান মাহমুদ। খুলে গেছে শার্টের বোতাম। দলের নারী নেত্রী বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত অ্যাডভোকেট রুবিনা মিরা ও অপর এক নেত্রীর কাধে ভর দিয়ে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
এবিষয়ে সিকদার হাসপাতালে ড. হাছান মাহমুদের দেখভাল করা রাঙ্গুনিয়ার কয়েকজন নেতৃবৃন্দ জানান, গ্রেনেড হামলায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে ঢাকা সিকদার হাসপাতালে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসারত ছিলেন তিনি।’ জানা যায়, তৎকালীন শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী ড. হাছান মাহমুদ ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক ছিলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনার নির্দেশে পিএইচডি করতে বেলজিয়াম যান। সেখানে বেলজিয়াম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এসময় বাংলাদেশের আলোচিত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ড নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তিনি নিন্দা প্রস্তাব উত্তাপন করেন। তৎকালীন জোট সরকারের বিভিন্ন দমন পীড়ন ও মানবাধীকার লঙ্গনের ঘটনায় বহির্বিশ্বে তিনি কুটনৈতিক তৎপরতা চালান। পরে পিএইচডি অর্জন শেষে দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার একান্ত সহকারীর দায়ীত্ব পালন করেন।
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম কিবরীয়ার সাথে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনিটরিং সেলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক হন। পরবর্তীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। ১/১১ সময় তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন হুমকি ও রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। প্রতিনিয়ত তাড়া করেছে গ্রেফতার ও গুমআতঙ্ক। তবুও এক মুহুর্তের জন্য তিনি ছেড়ে যাননি আওয়ামীলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রধানকে। এখনো আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে চারপাশে চলমান চক্রান্তের নীল-নকশা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব কণ্ঠ, প্রতিবাদের মানুষ ড. হাছান মাহমুদ। প্রতিদিন বক্তৃতা, বিবৃতি ও গণমাধ্যমে কথা বলছেন তিনি। এজন্য তাঁকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিত্যনতুন হুমকির। আর এই হুমকি নিয়েই শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছেন এই মানুষটি। প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বর্তমান আওয়ামী লীগের অন্যতম ‘সিপাহশালার’ তিনি।
রাঙ্গুনিয়ার প্রবীন রাজনৈতিক চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য জহির আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা বাঙ্গালী জাতির বিভিন্ন কলঙ্খজনক অধ্যায়ের মধ্যে অন্যতম এক অধ্যায়। ৭০’এর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলশ্রুতিতে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত হার যেনে আত্বসমর্পনের পূর্বে বুদ্ধিজীবি হত্যা, ৭৫’এর ১৫ আগস্টে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরবর্তীতে জাতীয় ৪ নেতা সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্ঠা সবই যেন একই সুত্রে গাঁথা। বাঙ্গালী জাতিকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার মানসেই নিসন্দেহে এই সব ধারাবাহিক ঘটনা। দেশের বিরুদ্ধে সকল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে হবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।