৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ৩৭ মাস আগে। প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি), লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হতেই সময় লাগে আড়াই বছর। সর্বশেষ সাড়ে আট মাস আগে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরির জন্য সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু এখনো চাকরিতে যোগদানের গেজেট হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।
দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ আর হতাশা দিন দিন বাড়ছে। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ২০ জন প্রার্থীর সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছে। চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা এসব যুবকের কণ্ঠে শুধুই হতাশা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিসিএসের গেজেট প্রকাশে অস্বাভাবিক দেরি হওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৩৬তম বিসিএসের গেজেটের বিষয়ে সারসংক্ষেপ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত হয়ে আসামাত্র গেজেট প্রকাশ করা হবে।
৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৫ সালের ৩১ মে। ২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে লিখিত পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি।
পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক ২০১৬ সালের এপ্রিলে নিয়োগ পাওয়ার পর একাধিকবার বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বদলায়নি। তাঁর অধীনে প্রতিটি বিসিএসের ফল প্রকাশে কম-বেশি আড়াই থেকে তিন বছর লাগছে।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক গত শুক্রবার বলেন, প্রচলিত কাঠামোতে এর চেয়ে সময় কমানোর সুযোগ নেই। বিসিএস ছাড়াও পিএসসিকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হয়। তবে পিএসসি সময় কমিয়ে আনতে একসঙ্গে একাধিক বিসিএসের পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রতিবছর একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।
পিএসসি সূত্র জনায়, নিকট-অতীতের প্রতিটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চাকরিতে যোগদানের গেজেট প্রকাশে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগছে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে একদিকে পিএসসি যেমন দেরি করছে অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও গেজেট প্রকাশে অনেক সময় নিচ্ছে।
পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য পিএসএসির সুপারিশ করা এক প্রার্থী বলেন, প্রতিটি ধাপে দীর্ঘ সময় লেগেছে। সুপারিশ পাওয়ার পর এত দিনেও যোগদান করতে না পারায় তিনি হতাশ। তাঁর পরিবারেও হতাশা বাড়ছে।
দীর্ঘসূত্রতার এই চিত্র ৩৭তম বিসিএসের ক্ষেত্রেও। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ২০১৭ সালের মে মাসে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। আর গত মাসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। এই বিসিএসে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুলিশি যাচাই শেষে গেজেট প্রকাশে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।
ফল প্রকাশের পরও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, একটি বিসিএসের নিয়োগে এত দীর্ঘ সময় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনা জরুরি। একটা বিসিএসের জন্য কোনোভাবেই এক-দেড় বছরের বেশি সময় লাগা উচিত নয়।