৩৬তম বিসিএস’র প্রথমদের গল্প

:
: ৬ years ago

৩৬তম বিসিএসে সফল তারা। মেধা, শ্রম ও যোগ্যতা দিয়ে একে একে সাফল্যের সবগুলো সিঁড়ি ছুঁয়েছেন। আজ তাদের স্বপ্ন পূরণের দিন। চোখে-মুখে একরাশ স্বপ্ন আর দেশমাতৃকার সেবা করার উদ্দেশ্যে একঝাঁক তরুণ কর্মকর্তা আজ যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে সম্মানজনক চাকরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে।

কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়ার এ পথ-পরিক্রমা মোটেও সহজ ছিলো না তাদের জন্য। তিন বছরের এক দীর্ঘ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে যাওয়া প্রায় দুই সহস্রাধিক ছেলে-মেয়ে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

দীর্ঘ এ পথে নানা প্রতিকূলতা আসলেও পিছিয়ে যাননি তারা। দৃঢ় মনোবল আর লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে এগিয়ে চলছেন।

অনলাইনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী সদ্য নিয়োগ পাওয়া তরুণ কর্মকর্তারা শুনিয়েছেন তাদের সফলতার গল্প। বলেছেন, প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে তাদের স্বপ্নের কথা। দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের।

পুলিশে প্রথম মো: সালাহ্উদ্দিন ‍রিফাত
পুলিশে প্রথম রিফাত ফলাফলের তালিকায় একেবারে নিচ থেকে শুরু করেছিলেন নিজের রোল নম্বরটি খোঁজা। তবে তালিকায় নিচ থেকে দেখতে দেখতে একেবারে উপরে গিয়ে দেখতে পান নিজের রোল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।

সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত একের পর এক আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোন আসতে থাকে রিফাতের কাছে। মানুষের ভালোবাসায় সেদিন আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। বুঝতে পেরেছিলেন তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি।

ভোলার ছেলে রিফাত এসএসসি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন ভোলাতেই। স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে।

তবে সেসময় ক্লাসে বন্ধুদের কেউই বিসিএসের  প্রতি তেমন আগ্রহী না হলেও খুব কাছের বন্ধুরা মিলে ছয়জনের একটি গ্রুপ করে শরু করন পড়াশুনা। আর সেই ছয় বন্ধুর ৬ জনই সফল হয়েছেন ৩৬তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে।

পুলিশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বদলাতে চান রিফাত। থানায় এসে বা পুলিশের কাছে এসে কোনো মানুষ যেনো সেবা বঞ্চিত না হন সেদিকটায় সর্বোচ্চ দৃষ্টি থাকবে তার। রিফাত বিশ্বাস করেন একেবারে গোড়া থেকে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করলেই দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।

বিসিএস পরিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সালাহ্উদ্দিন রিফাত বলেন: ‘বিসিএস একটি সাধনা। এ পথে যাত্রা শুরুর পূর্বেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। বিসিএস এর প্রতিটি ধাপের জন্য পিএসসির সিলেবাস রয়েছে, রয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। প্রথমেই এসব বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজের দুর্বলতাগুলোকে সনাক্ত করে তা দূর করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করতে হবে। সুশৃঙ্খল পরিশ্রম নিজের প্রস্তুতিকে যেমনি সুসংহত করবে তেমনি আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করবে।’

সফলতার ক্ষেত্রে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে নব্য এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন: ‘সফল হবার জন্য আপনি কতটা মেধাবী তার চেয়ে বড় বিষয় আপনি কতটা পরিশ্রমী। তবে পরিশ্রমটা হতে হবে সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল।’

প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম মো: ইসমাইল হোসেন
প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হবার গৌরব অর্জনকারী ইসমাইল হোসেন জানান, প্রথম হব এ ধরনের কোনো লক্ষ্য ছিলো না। তবে প্রথম হবার পরের অনুভূতিটা ছিলো স্বপ্নের মতো।

বন্ধুর মাধ্যমে প্রথম জানতে পারেন তার ফলাফল। সেসময় মা পাশে থাকায় মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই আনন্দ ভাগাভাগি করেছিলেন তিনি।

গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হলেও ছোট থেকে ঢাকাতেই তার বেড়ে ওঠা। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইসমাইল ২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করেন যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল থেকে। ২০০৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে। এরপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে।

বড় বানকে দেখেই শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। আর এ বিষয়ে তাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বাবা-মা।

জনপ্রশাসনের যে কাজ সরকারের হয়ে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া, সরকারের পক্ষ থেকে সে কাজই করতে চান ইসমাইল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ কর্মকর্তা।

নিরীক্ষা ও হিসাবে প্রথম তানজিদ আহমেদ শোভন
৩৬তম বিসিএস ছিলো তার প্রথম বিসিএস। আর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিলো নিরীক্ষা ও হিসাব। আর সেখানেই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।

পিরোজপুরের ছেলে শোভন ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে পাড়ি জমান রাজধানীতে। শৈশব থেকে শুরু করে পুরোটা সময় কেটেছে ঢাকাতেই।

এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগে। সেসময় থেকেই স্বপ্ন ছিলো তার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট হবার। কিন্তু বাস্তবতা আর ব্যাক্তিগত প্রয়োজনেই স্বপ্নটা পরিপক্ক হবার আগেই মোড় নেয় অন্যদিকে।

সিদ্ধন্ত নেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেবার। আর তার পরই শুরু হয় তার রাত-দিন পড়াশুনা। ইংরেজি, অংক আর বিজ্ঞানের বেসিকটা ভালো হওয়ায় খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি শোভনকে।

কঠোর পরিশ্রম আর দীর্ঘ চড়াই-উৎরাইয়ের পর আসে সেই কাঙ্খিত ফল প্রকাশের দিন। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আপ্লুত হয়ে পড়েন শোভন। আত্মীয়-পরিবার সবার সাথে সেদিন ভাগ করে নিয়েছিলেন নিজের ফল প্রকাশের আনন্দ।

নিজের অবস্থান থেকে কীভাবে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে শোভন বলেন: ‘সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চাই।’

নিজের অবস্থান থেকে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যতটা কাজ করা সম্ভব তার পুরোটা করতে চান তিনি।

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই তরুণ কর্মকর্তা বলেন: চোখ-কান খোলা রেখে পড়াশুনার কোনো বিকল্প নেই। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা গুরুত্বহীন। সেখান থেকে গুরুত্বহীন বিষয়গুলো বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাছাই করে পড়তে হবে।

পড়াশুনার ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক পড়াশুনার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন এ কর্মকর্তা। শোভন বিশ্বাস করেন লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে নিয়মিত পড়াশুনা করলে সফলতা আসবেই।